আজ ১ মার্চ মঙ্গলবার জাতীয় বীমা দিবস। সারাদেশে তৃতীয়বারের মতো পালন করা হচ্ছে ‘জাতীয় বীমা দিবস ২০২২’। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘বীমায় সুরক্ষিত থাকলে, এগিয়ে যাব সবাই মিলে’। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তত্ত্বাবধানে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের সহযোগিতায় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে দিবসটি উদযাপন করা হবে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আয়োজিত জাতীয় বীমা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এফসিএ, এমপি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্রাহকের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বীমা সেবা প্রদান করতে হবে। তিনি বলেন, বীমা নিয়ে মানুষের আস্থা বাড়াতে হবে। মানুষকে বীমার বিষয়ে আগ্রহী করতে নতুন নতুন পদ্ধতি কাজে লাগাতে হবে। আরও ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে যেন মানুষ বীমা করে।
বীমা সেবাকে জনপ্রিয় করাসহ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বের মতো বীমা ব্যবস্থা আমাদের দেশেও চালু হোক -সেটাই আমরা চাই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বীমা কোম্পানিতে ছিলেন বলেই ৬ দফা প্রণয়ন সহজ হয়েছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অফিসে বসে বঙ্গবন্ধু নিজেই ৬ দফা লিখেছিলেন এবং মোহাম্মদ হানিফ এটা টাইপ করেন। দিনের পর দিন তিনি এটা লিখেছেন। এটাই বাঙালী জাতির স্বাধীনতার ভিত্তি।
শেখ হাসিনা বলেন, এই মাসে জাতির পিতা বীমা কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছিলেন, এর পেছনে একটা কারণ আছে। আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের শাখা প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তখন তার ঢাকার বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। বীমা কোম্পানির সুবাদে তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত রেখেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে আমরা বীমা অধিদপ্তরকে বিলুপ্ত করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করি। আমরা ‘জাতীয় বীমা নীতি-২০১৪ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বীমা খাতের বিকাশে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য প্রবাসী কর্মী বীমা, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি মোকাবিলায় হাওড় এলাকায় সীমিত পরিসরে আবহাওয়া সূচকভিত্তিক শস্য বীমা চালু করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদুৎ প্রকল্পের মতো মেগা প্রকল্পগুলোর বীমা ঝুঁকি সাধারণ বীমা করপোরেশন গ্রহণ করেছে। শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতা বা অভিভাবকের অকাল মৃত্যুতে বা শারীরিক অক্ষমতায় তাদের শিক্ষাজীবন যাতে ব্যাহত না হয় সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা পরিকল্প চালু করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সর্বসাধারণের দুর্ঘটনাজনিত ক্ষয়-ক্ষতি রোধকল্পে সাধারণ বীমা করপোরেশন বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা চালু করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল। বীমা ব্যবস্থাকেও ডিজিটাইজ ও অটোমেশনের মধ্যে আনতে হবে এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি বীমা খাতে অন্তুর্ভুক্ত করতে হবে। গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে ইউনিফাইড ম্যাসেজিং প্লাটফরম (ইউএসপি) পদ্ধতি চালু করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত বিশ্বের মতো বীমা ব্যবস্থা আমাদের দেশেও চালু হোক- সেটাই আমরা চাই। আমাদের সরকার বেশ কয়েকটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অনুমতি দিয়েছে- এগুলো আরও কার্যকর করতে হবে। আমরা স্বাস্থ্য বীমাও চালু করতে চাই। এজন্য কাজ শুরু করতে হবে। নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী আমরা সকলের জন্য সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছি। এতে সবার জীবনের নিশ্চিয়তা প্রদান করতে হবে।
ছোটবেলার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ একটা পাটের গুদামে আগুন লেগে যেতো। আগুন লাগার সাথে সাথে সব পাট পুড়ে যেতো আর বীমা কোম্পানির কাছ থেকে বিরাট অঙ্কের টাকা নিত। একবার এটা খোঁজ করে দেখা গেলো আসলে মালিকরা পাট বিক্রি করে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দিত।
তিনি বলেন, একই ঘটনা আমি পেয়েছি গার্মেন্টস সেক্টরে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যেতো ঘন ঘন শুধু আগুন লাগে। আমার সন্দেহ হলো। আমি এর নজরদারি শুরু করলাম। ঠিক দেখা গেলো ঘটনা তাই। পয়সা দিয়ে একটা লোক ঠিক করে আগুল লাগিয়ে পত্র-পত্রিকায় প্রচার করে বিশাল অঙ্কের টাকা দাবি করল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দুই নাম্বারি করে বীমার টাকা নিতে চায় এটা আরো ভালো করে দেখতে হবে। বীমা মানে একটি আমানত। অনেক সময় আমাদের গ্রাহকদের টাকা ঠিকমতো দেয়া হয় না। মনে হয় তারা (কোম্পানি) ভুলেই গেছে। বীমা নিয়ে নানা হয়রানি হয়-এসব বন্ধ করতে হবে। বীমা দাবি নিষ্পত্তি ও বীমার আর্থিক লেনদেনে আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে।
থার্ট পার্টি মটর বীমাকে একটা ধাপ্পাবাজি বীমা মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, থার্ট পার্টি বীমা একেবারেই বন্ধ করে দিতে হবে। এটা একেবারে ধাপ্পাবাজি, ধোকাবাজি ছাড়া কিছুই না। কারণ আমি নিজেও এর ভুক্তভোগী। তিনি আরো বলেন, থার্ট পার্টি বীমা মানেই একটা লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালানো। এর ফলাফল হলো- যিনি বীমা করেছেন তিনি ভাবছেন আমি টাকা বাঁচালাম।
উল্লেখ্য, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য বীমা পরিকল্পের নামকরণ করা হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু প্রতিবন্ধী সুরক্ষা বীমা’। আজ ১ মার্চ জাতীয় বীমা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে উদ্বোধন ঘোষণা করা হবে নতুন এই বীমা পরিকল্পের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বীমা খাতে তার অনবদ্য অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে এবং মুজিববর্ষে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধীর (এনডিডি) স্বাস্থ্য বীমা পরিকল্পটিকে ‘বঙ্গবন্ধু প্রতিবন্ধী সুরক্ষা বীমা’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও জীবনঝুঁকির ক্ষতি মোকাবিলায় অটিজম ও নিউরো- ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধীদের (এনডিডি) বীমার আওতায় আনতে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে উদ্যোগ নেয় সরকার। পাইলট প্রকল্প হিসেবে এটি বাস্তবায়নে কাজ করছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং সাধারণ বীমা করপোরেশন। প্রাথমিকভাবে অটিজম, ডাউন সিট্রেম, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও সেরিব্রাল পালসি এই ৪ ধরনের নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধীরা এই বীমা সুবিধা পাবেন।