বাংলাদেশকে অব্যাহত সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে চলমান আলোচনা আমাদের দু’দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। সাক্ষাৎ শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমের কাজের ধারা, সারা বিশ্বব্যাপী সামাজিক গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জসহ অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি, বাংলাদেশে যেভাবে গণমাধ্যম কাজ করে অনেক উন্নয়নশীল দেশে এভাবে কাজ করতে পারে না। আমি যুক্তরাজ্যের উদাহরণ দিয়েছি। সেখানে গণমাধ্যমে কোনো ভুল সংবাদ পরিবেশিত হলে, কারও বিরুদ্ধে অসত্য সংবাদ পরিবেশিত হলে, কারও চরিত্র হনন করা হলে যেভাবে গণমাধ্যমকে জরিমানা গুনতে হয়, আমাদের দেশে তেমনটি নয়। বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমের তুলনামূলক চিত্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনীকে মার্কিন সহায়তা বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ দমনে তাদের সহায়তার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘ভবিষ্যতে দু’দেশের আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের লক্ষ্যে নানাদিক নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। মার্কিন রাষ্ট্রদূতও সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ যেভাবে কাজ করছে, তার প্রশংসা করেছেন।’
র্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সেটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়াও দীর্ঘ, তবে তা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে।’
এ সময় রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের জানান যে, বাংলাদেশকে আরও ভালোভাবে জানবার জন্য তিনি মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ বছরের সম্পর্ক দ্রুত আরও ঘনিষ্ঠ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। মন্ত্রীর দপ্তর ও মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যমন্ত্রী এদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়-বিএসএমএমইউ আয়োজিত ‘ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আলোচনা’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
এ সময় ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মুজিবনগর সরকার দেশের প্রথম সরকার যার রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন বিধায় উপরাষ্ট্রপতি তখন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সরকারের অধীনেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে এবং তখনকার অন্য চাকুরেদের মতো বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানও এই সরকারের অধীনে চাকরি করেছেন, তাঁর মাসিক বেতন ছিল ৪০০ টাকা।’
বিএসএমএমইউয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে এ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সনাল ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ।
সভাপতির বক্তৃতায় উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম কার্যকরী সরকারের শপথ নেওয়ার এই দিন (১৭ এপ্রিল) মুজিবনগর দিবস বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন এবং স্বাধীনতার চেতনা জাগরুক রাখার চিরন্তন প্রেরণা।’