ঢাকা: ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। কেউ শিক্ষার্থীদের চাঁদাবাজি, কেউবা কমদামে পণ্য কেনা নিয়ে সংঘর্ষ বলে ধারণা করছেন।
আসলে নিউমার্কেটের রাস্তায় ২ ফাস্টফুড দোকানের টেবিল বসানো নিয়ে কর্মচারীদের সঙ্গে বিবাদে থেকে এ সংঘাতের শুরু হয়। এই বিবাদে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে শায়েস্তা করতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ডেকে আনে।
বুধবার (২০ এপ্রিল) সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, মার্কেটের চার নম্বর গেটের ওয়েলকাম ফাস্টফুডের কর্মচারী বাপ্পী ও ক্যাপিটালের কর্মচারী কাওসারের মধ্যে সন্ধ্যায় কথা কাটাকাটি থেকেই সংঘাতের শুরু। দুটি দোকানের মালিক আপন চাচাতো ভাই। ইফতারের সময় নিউমার্কেটের ভেতরে হাঁটার রাস্তায় টেবিল পেতে বসে ইফতারের ব্যবস্থা করে ফাস্টফুডের দোকানগুলো।
মূলত এ বিরোধের সূত্রপাত ওয়েলকাম ফাস্টফুডের দুই কর্মচারীর মধ্যে। বাগ-বিতণ্ডার একপর্যায়ে কাওসারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে বাপ্পী ওই জায়গা থেকে চলে যায়।
ওই দিন (সোমবার) রাত ১১টার দিকে বাপ্পীর সমর্থক ১০-১২ জন যুবক আসেন নিউমার্কেটে। এসময় তারা হাতে রামদা নিয়ে আসেন। তারা ক্যাপিটাল দোকানটিতে গিয়ে কাওসারের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান। সেখানে কাওসার সমর্থকরা বাপ্পীর সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়ে মার্কেট থেকে বের করে দেন। বাপ্পী সমর্থকরা মার্কেট থেকে পালিয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি দলকে নিয়ে এসে মার্কেটে হামলা চালায়।
নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, নিউমার্কেটের ভেতর দুই দোকানদারের মধ্যে ঝামেলা হয়। এর জেরেই এক পক্ষ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসে। এতে করে দুই পক্ষের মধ্যে ধ্বস্তাধ্বস্তি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। ওই সময় শিক্ষার্থীরা চলে যান। এরপর তাঁরা গুজব ছড়ান ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের মারধর করেছেন, কুপিয়ে জখম করেছেন। পরে তাঁরা নিউমার্কেটে এসে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করার চেষ্টা করেন।
ওয়েলকাম ফাস্ট ফুডের মালিক মো. রফিক বলেন, বাপ্পীকে মারধরের পর বিষয়টি নিয়ে বসার কথা ছিল। কিন্তু বাপ্পী এর আগে তাঁর পরিচিত ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের জানান। তাঁরা এসে এ বিষয়ে কাওসারের কাছে জানতে চান। তখন কাওসার তাঁর লোকজন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে মার্কেট থেকে বের করে দেন। পরে কলেজের শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে এসে হামলা করেন।
সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত যা বুঝা যাচ্ছে, মূলত দোকানের কর্মচারীদের সংঘর্ষের মধ্যে ঢাকা কলেজ থেকে কিছু লোকজন এসেছিলো। তারপর তাদের মধ্যে ঝামেলা হলে, তারা কলেজে ফিরে গিয়ে বলেন, তারা মার্কেটে খেতে গিয়েছিল এসময় তাদের মারধর করা হয়েছে। সেখান থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। রাত আড়াইটা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। এরপর মঙ্গলবার সকাল থেকে আবার দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। দিনভর সংঘর্ষে অন্তত ৪১ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আহত একজন পথচারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আহত তিনজন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গুরুতর আহত এক শিক্ষার্থীকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, সোমবার রাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের শুরু থেকেই বিভিন্ন রকম তথ্য পাচ্ছিলাম আমরা।
তিনি বলেন, ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে আমাদের গোয়েন্দা টিমও মাঠে কাজ করে। পাশাপাশি একাধিক ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের বক্তব্যও নেওয়া হয়। তবে কারণ যেটিই হোক না কেন পুলিশ দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এ ঘটনায় বুধবার (২০ এপ্রিল) মামলা হবে। অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও আহত-নিহতের ঘটনায় একাধিক মামলায় একাধিক আসামি করা হতে পারে।