দেশের যুব সমাজ ও তাদের মেধা টিকিয়ে রাখতে গুরুত্ব সহকারে ব্যাপকভাবে ডোপ টেস্ট চালুর কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
রোববার (২৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার-বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে একটি আলোচনা সভায় যোগ দেন মন্ত্রী।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে কথাটি বলেন তিনি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উদ্যোগে আলোচনা সভাটি আয়োজিত হয়। সভার পর পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশে ব্যাপকভাবে ডোপ টেস্ট করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সে কর্মসূচি আমরা শুরু করবো। আমরা আগে মাদকাসক্ত শনাক্ত করবো পরে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। যেকোনো মূল্যে আমরা দেশকে মাদকাসক্ত মুক্ত করবো।
মাদকের চোরাচালান ও অপব্যবহার বর্তমান বিশ্বের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিশ্বের উন্নত-অনুন্নত সব দেশই আজ এ সমস্যায় আক্রান্ত। আমাদের দেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও ভৌগোলিকভাবে বিশ্বের প্রধান দুটি মাদক উৎপাদনকারী বলয়ে অবস্থিত। ফলে হওয়ায় এটি মাদক চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে দেশের উল্লেখযোগ্য অংশ, বিশেষ করে যুব সমাজের একটি অংশ মেধা ও কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলে পরিবার ও সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অনেক ভয়ঙ্কর সব মাদক বাংলাদেশে ঢুকছে। ভারতের সঙ্গে প্রতিনিয়ত আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। আমরা তাদের সব সময় অনুরোধ করছি এবং আমাদের অনুরোধে তারা ফেনসিডিল কারখানা সরিয়ে নিয়েছে। যে দুয়েকটি আছে তাও ধ্বংস করে দিচ্ছে। মিয়ানমার থেকে মাদক আসছে। এসব মাদক বন্ধ করতে আমরা সেখানকার সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেছি। তারা মাদক চোরাচালান বন্ধে অনেক কিছুই বলে, কিন্তু কিছুই করেন না।
তাই আমরা আমাদের সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) শক্তিশালী করছি। আমাদের কোস্ট গার্ডকে শক্তিশালী করছি। মাদক যাতে দেশে না ঢুকতে পারে সেদিকে নজরদারি করছি। আমরা সীমান্ত এলাকায় সেন্সর বসানোর ব্যবস্থা করছি, যাতে কেউ আসলে বা গেলে তার অস্তিত্ব আমরা টের পাই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে যে পরিসংখ্যান রয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ৭ দশমিক ৫ থেকে ৮ মিলিয়ন মাদকাসক্ত রয়েছে। কারও কারও পরিসংখ্যানে আরও বেশি। মোট মাদকাসক্তের মধ্যে ৪৮ শতাংশ শিক্ষিত। মাদকাসক্তদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ আবার যৌন অপরাধী। জেলখানায় যত মানুষ আছে এর বেশিরভাগই মাদক পাচারকারী কিংবা ব্যবসায়ী। এটা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মাদকসেবীদের ৮০ শতাংশই যুবক। প্রধানমন্ত্রী সে কারণেই মাদকে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছিলেন।
আমরা সরকারিভাবে বলেছিলাম প্রকাশ্যে কেউ ধূমপান করতে পারবে না। এখনো কিন্তু একটা মেনে চলছে। সমীক্ষা বলছে ৮ শতাংশ ধূমপায়ী কমেছে। কিন্তু আমার মনে হয় আরও কমেছে। সবাই মিলে কাজ করলে আমরা এখান থেকে পরিত্রাণ পেতে পারবো।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা এ মন্ত্রী আরও বলেন, দেশকে মাদক মুক্ত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতিকে সামনে রেখে আমরা কাজ করছি। পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার ও ভিডিপি’র পাশাপাশি নোডাল এজেন্সি হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অধিদপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করা হয়েছে। জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাদক অপরাধীদেরকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ এবং অন্যান্য বিধিমালা যুগোপযোগী করে সংশোধন করা হয়েছে। অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা- ২০২২ প্রণয়ন করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোয় লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়ানো হয়েছে। এদিকে চারটি বিভাগীয় শহরে টেস্টিং ল্যাব নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী মাদকের আগ্রাসন মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রাকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। আরও বলেন, সমগ্র মানব সমাজ দীর্ঘদিন ধরে মাদক মুক্তির পথ অন্বেষণ করে যাচ্ছে। ১৯৮৭ সনে জাতিসংঘের ৪২তম অধিবেশনে ২৬ জুনকে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার-বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ১৯৮৮ সাল থেকে সারা বিশ্বে এদিনটি পালিত হয়ে আসছে। চলতি বছর এ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘মাদক সেবন রোধ করি, সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ি’।
সভায় বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. শামসুল হক টুকু। তিনি বলেন, দেশে মাদক উৎপাদিত হয় না। এই দেশে মাদক রোধ করতে হলে প্রথমে মাদকের চাহিদা কমাতে হবে। তবেই মাদক হ্রাস করা সম্ভব হবে।
মাদকের হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হলে জনগণকে একত্রে লড়তে হবে। প্রতিটি পরিবারের মধ্যে সচেতনতা থাকা প্রয়োজন। সন্তান কি করে, সে মাদক সেবন করে কিনা, ধূমপান করে কিনা- বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে। তবেই মাদকমুক্ত দেশ, সমাজ গড়া সম্ভব।
ডোপ টেস্ট নামটি অনেক পরিচিতি লাভ করেছে উল্লেখ করে টুটু আরও বলেন, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সময় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির নিয়োগের জন্য ডোপ টেস্ট করা হবে। দেশের প্রতিটি সেক্টরে মাদকমুক্ত করার জন্য এই ডোপ টেস্ট অনেক কার্যকরী। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ডোপ টেস্ট করে অনেক মাদকাসক্ত কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আজিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।