ঢাকাসোমবার , ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • অন্যান্য
  1. অর্থনীতি
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. জাতীয়
  5. জীবনধারা
  6. বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
  7. বিনোদন ভুবন
  8. বিবিধ
  9. ভিডিও নিউজ
  10. রাজধানী
  11. রাজনীতি
  12. শিক্ষা
  13. সর্বশেষ
  14. সারাবাংলা
  15. স্বাস্থ্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

গাড়ির নিচে নারী বিবেকহীন শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ৩, ২০২২ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

গাড়িটি ধাক্কা দিলে সড়কে পড়ে যান মোটরসাইকেল আরোহী। গায়ের জামা আটকে যায় গাড়ির বাম্পারে। তখনো চলছিল গাড়িটি। আশপাশের লোকজন থামানোর চেষ্টা করছিল গাড়িটিকে। কিন্তু বেপরোয়া চালক টেনেহিঁচড়ে নিয়ে চলে বাম্পারে আটকে যাওয়া মোটরসাইকেল আরোহীকে। পেছন পেছন তাড়া করে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে গাড়িটি থামানো গেল, রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত নিথর দেহটি উদ্ধার করে জনতা।

রাজধানীর শাহবাগসংলগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের উল্টো পাশের সড়কে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন মোটরসাইকেল আরোহী রুবিনা আক্তার (৪৫)। গাড়ির চালক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের (আইআর) সাবেক সহযোগী অধ্যাপক জাফর শাহ (৪৮)। নৈতিক স্খলনের অভিযোগে ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। জনতা গাড়িটি আটকের পর গণধোলাই দেয় চালককে। গাড়িটিতে ভাঙচুরও করা হয়। পরে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। আর রুবিনার নিহর দেহটিও নেওয়া হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, ঢাকা মেট্রো-ক ০৫-০০৫৫ নম্বরের গাড়িটি চালিয়ে শাহবাগ থেকে টিএসসির দিকে আসছিলেন সহযোগী অধ্যাপক জাফর। গাড়িতে আর কেউ ছিলেন না। নিজেই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ চারুকলা অনুষদের উল্টো পাশের সড়কে এক নারী তার গাড়ির নিচে পড়ে আটকে যান। আশপাশে লোকজনের উপস্থিতি দেখে চালক ভয় পেয়ে যান। তিনি বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে থাকেন। ওই নারীকে গাড়ির নিচ থেকে উদ্ধার করার জন্য পথচারীরা ওই চালককে থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি বেপরোয়া গতিতে গাড়ি নিয়ে টিএসসি হয়ে নীলক্ষেতের দিকে চলে যান। এ সময় পথচারীরা গাড়িটিকে পেছন থেকে তাড়া করেন। পরে নীলক্ষেতের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ থেকে পলাশী অভিমুখী সড়কের মুখে গাড়িটি আটকে ফেলেন পথচারীরা। গাড়ির নিচ থেকে ওই নারীকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ সময় গাড়ির চালককে গণপিটুনি দেন পথচারীরা। গাড়িটি ব্যাপক ভাঙচুরও করা হয়। আহত চালককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। আর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত রুবিনার মৃত্যু হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিহত রুবিনা আক্তার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তেজকুনিপাড়ায় থাকতেন। তার স্বামী এক বছর আগে মারা গেছেন। তাদের এক সন্তান রয়েছে। নিহত রুবিনার দেবর নুরুল আমিন বলেন, ‘রাজধানীর হাজারীবাগের সেকশন এলাকায় আমার বাসা। তেজগাঁও থেকে ভাবিকে নিয়ে মোটরসাইকেলে হাজারীবাগের বাসায় যাচ্ছিলাম। পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বিপরীত পাশে মোটরসাইকেলটিকে একটি গাড়ি ধাক্কা দিলে ভাবি গাড়ির সামনে পড়ে যান। আমিও পাশে পড়ে যাই। ভাবি প্রাইভেট কারের বাম্পারের সঙ্গে আটকে যান। পরে গাড়িটি ভাবিকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে দ্রুত চালিয়ে যেতে থাকে। নীলক্ষেত পর্যন্ত গেলে স্থানীয়রা গাড়িটিকে আটক করে এবং ভাবিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।’

জাফর শাহর বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি প্রক্টর এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘নৈতিক স্খলনের অভিযোগ ওই শিক্ষককে ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। তার সঙ্গে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।’

ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘দুর্ঘটনার শিকার প্রাইভেট কারের চালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআর ইনস্টিটিউটের সাবেক সহযোগী অধ্যাপককে গণধোলাই দিয়েছে স্থানীয় লোকজন। তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি রাখা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিহত রুবিনা আক্তারের মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

শাহবাগ থানায় গতকাল শুক্রবার রাত ৮টার দিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেছেন, এটি দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক ওই শিক্ষক স্বাভাবিক ছিলেন কি না তা তদন্তের পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী শাস্তির বিধান রয়েছে। এ আইনে যাতে শিক্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ঢাবি এলাকায় গাড়িচাপায় যে নারীর মৃত্যু হয়েছে সেটা নিয়ে আমাদের মামলার কাজ চলমান। এটি খুবই অমানবিক ও মর্মান্তিক একটি ঘটনা। চালক সুস্থ হলে আমরা তাকে জিজ্ঞেস করব, কেন তিনি এমন করেছেন। চালকের সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। আমরা এখনো চালকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। একটি নম্বর পেয়েছিলাম তার স্ত্রীর। কিন্তু কল দিলে রিং হয় কেউ ধরেন না, পরে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

প্রাইভেট কারচালক মাদকাসক্ত ছিলেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মো. শহিদুল্লাহ বলেন, তিনি এখনো চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানানোর পরে জানা যাবে তিনি কোন অবস্থায় ছিলেন। এর আগে বলতে পারছি না।