রাজধানীর বঙ্গবাজারের আদর্শ ইউনিটের তিনতলায় একটি গোডাউন থেকেই আগুনের সূত্রপাত। যার পাশেই কিছুটা উঁচুতে ছিলো নিরাপত্তারক্ষীদের থাকার ঘর। সেই রাতে সেহেরির ঘন্টাখানেক পরই গোডাউন থেকে ধোঁয়া বেরুতে দেখেন মসজিদের মুয়াজ্জিন।
তারা জানান, রাতে মার্কেটে বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ থাকলেও, মসজিদ ও নিরাপত্তারক্ষীদের ঘরে সচল ছিলো। সিটি করপোরেশেনের তদন্ত কমিটিও বলছে, মার্কেটের তৃতীয়তলা থেকে আগুনের থেকে আগুনের সূত্রপাত আর আগুনের কারণ হতে পারে মশা মারার কয়েণ বা জ্বলন্ত সিগারেট।
গত পাঁচ এপ্রিল আগুন লাগার শুরুর দিকের একটি ভিডিওচিত্র পাওয়া যায়। দুই মিনিট ৫১ সেকেন্ডের এই ভিডিওতেই আগুনের উৎপত্তিস্থলটি ষ্পষ্ট। যা ছিলো বঙ্গবাজারের আদর্শ ইউনিটের পূর্ব-উত্তর কোণে।
কিন্তু কি ছিলো এই পয়েন্টে? তিনতলা মার্কেটের বিন্যাসটাই বা কেমন ছিলো? তা জানতে মার্কেটের একটি নকশা প্রয়োজন। সেই নকশার ধারণা পেতে সহায়তা নেয়া হয় ব্যবসায়ী নাজমুল হাসানের। এই মার্কেটেই কেটেছে তার ১৮ বছর।
একজন সেলসম্যান থেকে তিনি এখন দোকান মালিক। বঙ্গবাজারের সব অলিগলি তার মুখস্ত। চোখ বন্ধ করেও মার্কেটের যে কোন প্রান্তে পৌঁছে যেতে পারেন। সেই ব্যবসায়ী নাজমুল আদর্শ ইউনিটের একটা নকশা আঁকেন নাজমুল।
নকশায় তিনতলা আদর্শ ইউনিটের নীচতলায় ছোট ছোট দোকান। দ্বিতীয় তলায় ছোট্ট একটা জেনারেটর রুম। পাশেই আরও কিছু দোকান। সিঁড়ির পাশে মার্কেট কমিটির অফিস। তিনতলার শুরুতেই পরপর দুটি গোডাউন। তারপর মসজিদ ও সারি সারি গোডাউন।
সে রাতে আদর্শ ইউনিটের মসজিদে ছিলেন ইমাম ও মুয়াজ্জিন। সেহেরির পর ১০-১২ জন মিলে ফজরের নামাজ পড়েন। ঘন্টাখানেক পরই পান আগুনের খবর।
তা আঁচ করতে পেরে রুমের বাইরে আসেন মুয়াজ্জিন। মসজিদের ১০-১৫ ফুট দক্ষিণের একটা গোডাউনে তিনি ধোঁয়া দেখতে পান। আগুন নেভাতে ব্যর্থ হয়ে খবর দেন ফায়ার সার্ভিসে।
যে গোডাউনে প্রথম আগুন ছড়াতে দেখেন; তার পাশেই ছিলো নিরাপত্তারক্ষীদের থাকার ঘর। ইমাম ও মুয়াজ্জিন জানান মাকের্টে বিদ্যুতের দুটি লাইন ছিলো। একটি লাইন রাত দশটায় বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে মসজিদ ও নিরাপত্তারক্ষীদের ঘরের লাইনটি সচল ছিলো।
এদিকে, চার এপ্রিল ভোরে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, মার্কেটের ছয়জন নিরাপত্তা প্রহরী ও একজন বিদ্যুৎমিস্ত্রির সাক্ষ্য অনুযায়ী আগুনের সূত্রপাতও হয়েছে আদর্শ ইউনিটের তৃতীয় তলা থেকে।
সেখানকার আলমগীরের এমব্রয়ডারি টেইলার্স থেকে আগুনের সূত্রপাত্র। এই টেইলার্সের সরাসরি ওপরে অবস্থিত চতুর্থ তলায় আদর্শ মার্কেটের আটজন নিরাপত্তা প্রহরীর থাকার কক্ষ ছিলো।
ঘটনার দিন ভোর আনুমানিক ৫টা ৪০ মিনিটে নিরাপত্তা প্রহরী বিল্লাল হোসেন আলমগীরের এমব্রয়ডারি টেইলার্সের তালা বন্ধ শাটারের নিচ থেকে আগুনের ধোঁয়া বের হতে দেখেন।
তিনি তখন ‘আগুন আগুন’ বলে চিৎকার করলে চতুর্থ তলা থেকে নিরাপত্তা প্রহরী দেলোয়ার ও মার্কেটের বিদ্যুৎমিস্ত্রি মামুন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
এরপর তিনজন মিলে ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তাঁদের চিৎকার শুনে মসজিদের ইমামসহ ও মুয়াজ্জিনসহ মার্কেটের অন্য প্রহরীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
নিরাপত্তা প্রহরীরা আগুন লাগার খবর ফায়ার সার্ভিসকে জানান এবং ঘটনার ১০ মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে চলে আসে। তারা আগুন নেভানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করে।
তদন্ত কমিটি মনে করে, সিগারেট বা মশার কয়েলের আগুন থেকে এই ঘটনা ঘটেছে। এতে তিন হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী সব হারিয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩০৫ কোটি টাকার।