স্বস্তি ফেরেনি ডিমের বাজারে, আবার বেড়েছে পেঁয়াজের দাম, দেশি ফলও নাগালের বাইরে, সুযোগ সন্ধানি ব্যবসায়ীদের দুষছেন সাধারণ ক্রেতাগণ।
বিগত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে রাজধানীর বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে । আলু ও পেঁপে বাদে ৬০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি নেই বললেই চলে। ডিম, পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী, মাছ-মাংসের দামও বেশি। এ অবস্থায় সবজির দাম আরো বাড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাজারে অবলোকন করা হয়, গতকাল শুক্রবার বাজার করতে আসা ইমতিয়াজ আবেদিন নামের একজন ক্রেতা হতাশার সঙ্গে জানান, ‘ছোট্ট একটা বাঁধাকপির দাম ৪০ টাকা! এটাকি ভাবা যায়। আলু তো সব সময় ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যেই থাকত। সেই আলু এখন ৪৫ টাকা!’ ব্যবসায়ীরা বলেছেন, প্রতি বছর গ্রীষ্মের এই সময়ে সবজির দাম কিছুটা বেশি থাকে। কিন্তু এবার দেশে টানা বৃষ্টির কারণে সবজির দাম অন্যবারের তুলনায় বেশি।
গতকাল রাজধানীর খুচরা কাঁচাবাজারগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়শ, পটোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, গাজর ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, ধুন্দল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুর মুখি ৮০ টাকা ও মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাউ ও চাল কুমড়া আকারভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।
এদিকে গত কোরবানির ঈদের সময় কাঁচা মরিচের দাম হুহু করে বাড়তে থাকলে তা আমদানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখনো বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়। কাঁচা মরিচের পাশাপাশি পেঁয়াজের দামও বাড়তি। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজে ১০ টাকা বেড়ে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে দাম বাড়ার এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৬৫ থেকে ৮০ টাকা বলা হলেও বাজারে তা মানভেদে ৭০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে রসুনের দামও। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি রসুনে ২০ টাকা বেড়ে দেশি রসুন ২২০ থেকে ২৪০ টাকা ও আমদানি করা রসুন ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্বস্তি ফেরেনি ডিমে : বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে প্রয়োজনে ডিম আমদানির ঘোষণায় দাম কিছুটা কমলেও এখনো স্বস্তি ফেরেনি। গতকাল খুচরা বাজারে প্রতি হালি ফারমের বাদামি ডিম ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়। যা কয়েক দিন আগে ৬০ টাকা হালিতে বিক্রি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ডিমের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পোলট্রি খাবার উৎপাদনে নীতিসহায়তা দেওয়ার কথা ভাবছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এজন্য কী ধরনের নীতিসহায়তা দেওয়া যায়, তা পর্যালোচনা করতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খোন্দকার মো. মহসিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ডিমের দাম বৃদ্ধির একটি বড় কারণ পোলট্রি ফিডসহ অন্য সব খরচ বেড়ে যাওয়া। তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ফিডসহ অন্যসব খরচ বেড়ে গেছে। এতে ডিমের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। ২০২০ সালে প্রতি কেজি ভুট্টার দাম ছিল ১৭ দশমিক ৩০ টাকা, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকার ওপরে। অথচ পোলট্রি খাদ্যে ভুট্টার ব্যবহার ৫৭-৫৮ শতাংশ। এছাড়া পোলট্রি খাদ্যে সয়াবিন খইলের ব্যবহার শতকরা ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। ২০২০ সালে প্রতি কেজি সয়াবিন খইলের দাম ছিল ৩৫-৩৬ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি সয়াবিন খইলের দাম ৮৪ টাকারও বেশি। এছাড়া জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি এবং ডিজেল, বিদ্যুৎ, পরিবহনসহ সবকিছুর দাম বাড়ার কারণে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। এসব কারণে ডিমের দাম বেড়েছে।
মাছের দামও বেশি :দাম কম থাকায় স্বল্প আয়ের মানুষের মাছ হিসেবে তেলাপিয়া ও পাঙাশ ছিল পছন্দের শীর্ষে। কিন্তু দাম বাড়ায় এই মাছও কিনতে এখন দুই বার ভাবতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষদের। গতকাল বাজারে আকারভেদে প্রতি কেজি পাঙাশ ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় ও তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়। যা এক বছর আগেও যথাক্রমে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা ও ২০০ থেকে ২২০ টাকায় পাওয়া গেছে। গতকাল বাজারে রুই মাছ বিক্রি হয় ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজিতে। যা গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০০ টাকা বেড়েছে বলে টিসিবি জানিয়েছে। অন্যান্য মাছের মধ্যে কাতলা ৪২০ থেকে ৫৩০ টাকা, চিংড়ি ৯০০ থেকে ১৪০০ টাকা, টেংরা ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা, কই মাছ ২২০ থেকে ২৮০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, শিং মাছ ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকা, বোয়াল ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়।
মাছের পাশাপাশি গরুর মাংসের দামও বেড়েছে। কোরবানির ঈদের পর গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ টাকায় নেমে এলেও গত দুই সপ্তাহ ধরে তা ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খাসির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি ৩৪০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। কেজিতে ১০ টাকা কমে তা গতকাল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। তবে ভোক্তাদের জন্য সুখবর হলো সয়াবিন তেলের দাম কমেছে। ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮০ টাকা। এছাড়া সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেটের দাম কেজিতে দুই টাকা কমে তা মানভেদে ৬২ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মানুষের শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণের একটি বড় অংশ আসে ফল থেকে। বাজারে সেই মৌসুমি দেশি ফলের দামও বেশি। বছর দুয়েক আগে একটি আনারস ২০ থেকে ২৫ টাকায় পাওয়া গেলেও তা এখন ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য দেশি ফলের মধ্যে লটকন ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, পেয়ারা ৭০ থেকে ৯০ টাকা, ডেউয়া ২০০, জামরুল ১৪০ টাকা, সফেদা ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাকা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।