পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বিশৃঙ্খলায় অংশ নিয়ে কাজ বন্ধ রাখলে কিংবা বিশৃঙ্খলার কারণে কারখানা বন্ধ রাখতে হলে শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা অনুযায়ী ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ বা ‘কাজ নেই, মজুরি নেই’—এই নিয়ম কার্যকরের কথা বলেছেন তৈরি পোশাক কারখানার মালিকেরা। ইতিমধ্যে কিছু কারখানায় তা করা শুরু হয়েছে।
পোশাকশিল্পে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আজ বুধবার এক জরুরি আলোচনা সভায় বসেন তৈরি পোশাক কারখানার মালিকেরা। সেখানে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা বাস্তবায়নের কথা জানান।
রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে তৈরি পোশাকের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এতে এই খাতের প্রায় ২০০ মালিক উপস্থিত ছিলেন।
শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা অনুসারে, বেআইনি ধর্মঘটের কারণে কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকলে এবং সে রকম পরিস্থিতিতে শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ রাখলে, মালিকেরা কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন এবং এই সময়ে শ্রমিকদের মজুরি দিতে হবে না।
আলোচনা সভায় বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘শ্রম আইন অনুসারে এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের মজুরি ও বাৎসরিক মজুরি বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) হচ্ছে। নতুন মজুরি নির্ধারিত হলে সেটিও মানা হবে। আমরা জানিয়েছি, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকেই নতুন কাঠামোয় মজুরি দেওয়া হবে। ফলে সেই সময়ের আগেই এ ধরনের আন্দোলন, সহিংসতা ও ভাঙচুর অগ্রহণযোগ্য। এগুলো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
ফারুক হাসান আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশ ও শিল্পের স্বার্থে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে শ্রম আইনের ১৩(১) ধারা প্রয়োগ করবেন পোশাকমালিকেরা। ইতিমধ্যে আজ থেকে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় এ নিয়ম কার্যকর হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীকালও এটি চালু থাকবে এবং পরবর্তীকালে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে।
আলোচনা সভার শুরুর দিকে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ বলেন, কারখানা ভাঙচুর হলে বা শ্রমিকেরা কাজে না গেলে ১৩(১) ধারা বাস্তবায়নে সবাইকে একমত হতে হবে। এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হবে, সবাই তা মানবে। এ ছাড়া শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় এলাকাভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে এলাকায় সমস্যা হবে, সেখানে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ কে আজাদের এ কথার সঙ্গে সায় দিয়ে পরবর্তীকালে অনেকেই বক্তব্য দেন। যেমন বিজিএমইএর সহসভাপতি আরশাদ জামাল বলেন, শ্রমিক অসন্তোষের কারণে যেসব দিনে কারখানা বন্ধ থাকবে, সেই দিনগুলো সাধারণ ছুটি হিসেবে বিবেচিত হবে এবং কাজ না থাকলে মজুরিও থাকবে না। এ বিষয়ে সবার একমত হওয়া প্রয়োজন।
অনেকে সময়ের সুযোগ নিচ্ছেন
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, পাঁচ বছর পরপর মজুরি বোর্ডের সভা বসে। কিন্তু নির্বাচনের আগে হওয়ায় দেশি-বিদেশি একটি চক্র এই সময়ের সুযোগ নিতে চাইছে; অনেক ষড়যন্ত্র ভর করেছে এই খাতে।
শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন আরও বলেন, ‘দেশে ঋণখেলাপি হওয়া বড় সমস্যা। কিন্তু চলমান সংকটের কারণে অনেক পোশাকমালিক হয়তো আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাবেন।’
বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এস এম মান্নান বলেন, যারা মারামারি করছেন, কারখানা জ্বালিয়ে দিচ্ছেন, তাঁরা সবাই বহিরাগত। যাঁরা দেশের অগ্রগতি চান না, তাঁরা এসব কাজ করছেন।
দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘গত কয়েক দিনে আমরা শতাধিক শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সবাই জানিয়েছে, ভাঙচুরের সঙ্গে তারা জড়িত নয়; তাহলে এগুলো করছে কারা!’ সামাজিক মাধ্যমে উসকানিমূলক প্রচারণা চালিয়ে ভাঙচুর চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
হা–মীম গ্রুপের এমডি এ কে আজাদ বলেন, ইতিমধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে কিছু ভিডিও ফুটেজ হস্তান্তর করা হয়েছে; এসব ভিডিওতে কারখানায় হামলার প্রমাণ আছে। এফআইআরও করা হয়েছে কিন্তু এখনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। তিনি জানান, আশুলিয়ায় হা–মীমের চারটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এই অস্থির সময়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন।
শিল্প পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ও পোশাক কারখানার মালিক আবদুস সালাম বলেন, শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে সমন্বয়ের অভাব আছে।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কারখানা খোলা রাখা যাচ্ছে না আবার বন্ধ রাখলেও আক্রান্ত হতে হচ্ছে। তিনি সরকারের কাছে কারখানার নিরাপত্তা দাবি করেন।