ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে যান শেখ হাসিনা। তবে শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে নানা মহলে গুঞ্জন ছিল। এরই মধ্যে প্রকাশ্যে এলো তার সই করা সেই কথিত পদত্যাগ পত্রটি। তবে পদত্যাগ পত্রটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। সূত্র :দৈনিক ইনকিলাব
ঘটনাপ্রবাহ থেকে জানা যায়, প্রেসিডেন্ট বরাবর ৫ আগস্ট এই পদত্যাগটি দেন শেখ হাসিনা।
সংগৃহীত পদত্যাগ পত্র থেকে বুঝা যায়, শেখ হাসিনা লেখেন, “আমি গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাতে চাই যে, সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে যেখানে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং আর কোনো প্রাণহানি এড়ানোর জন্য আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করছি।”
তিনি আরও লেখেন, “এ ঘটনাগুলোতে আমি সম্পূর্ণ দায়িত্ব স্বীকার করছি এবং এ দেশের জনগণের নিরাপত্তা ও কল্যাণের প্রতি আমার অঙ্গীকার সবসময় অটুট থাকবে।”
পদত্যাগ পত্রে শেখ হাসিনা লেখেন, “গত পনেরো বছর ধরে আমি আপনাদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি, যা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্মান। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী প্রমাণ করছে যে, এ মুহূর্তে দেশকে এগিয়ে নিতে অন্য নেতৃত্বের প্রয়োজন। আমি আশা করি, আমার পদত্যাগ বাংলাদেশের উন্নয়নের নতুন পথ খুলে দেবে এবং শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।”
শেষ পর্যায়ে লেখেন, “এই কঠিন সময়ে আমার সরকার যা কিছু করেছে, তার জন্য আমি গভীরভাবে অনুতপ্ত। আমি সব বাধ্যবাধকতা মেনে নিচ্ছি এবং এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বৃহত্তর স্বার্থে নিয়েছি।”
দৈনিক ইনকিলাবের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্রটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট দুপুরে সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে চরে বোন রেহানাকে নিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। আর সেখানেই বর্তমানে তিনি অবস্থান করছেন। সম্প্রতি একটি ফাঁস হওয়া ফোনালাপে তাকে বলতে শোনা যায়, তিনি পদত্যাগ করেননি, তিনি এখনো বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। এরই মধ্যে প্রকাশ্যে এলো তার কথিত সেই পদত্যাগ পত্রটি। তবে, জনসম্মুখে এসব পদত্যাগ পত্র আসার ঘটনা বিরল।
এদিকে সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে শেখ হাসিনার পদত্যাগসংক্রান্ত পত্রটি ভুয়া দাবি করে দলটি।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের টিভি চ্যানেলের ফেসবুকে এরকম অপরিপক্ব এডিটেড কোনো পদত্যাগপত্র প্রকাশ, একটি দৈন্যতামাত্র।
পোস্টে বলা হয়, পদত্যাগপত্রে এখনো মুজিববর্ষ লোগো লাগিয়ে রেখেছে, যেই মুজিববর্ষ ২০২১ সালে শেষ! এ ছাড়া ভুয়া এই পদত্যাগপত্রটি অত্যন্ত অস্পষ্ট। পদত্যাগপত্রের ভাষায় যা মন চায় তা লিখে পাবলিশ করা হয়েছে।
ওই পত্রে শেখ হাসিনার স্বাক্ষরটিও গুগল থেকে নেওয়া দাবি করে বলা হয়, এতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মূল পেজের সঙ্গে স্বাক্ষরের অংশের পিক্সেলের পার্থক্য রয়েছে। আর ৫ আগস্ট ছিল ২১ শ্রাবণ, কিন্তু পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে ২০ শ্রাবণ!
পোস্টে আরও বলা হয়, দেশের মিডিয়াকে এরকম নগ্নভাবে ব্যবহার করে নিজেদের হাসির পাত্র বানাবেন না। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার যে আনুষ্ঠানিকতা সেই সময় নেননি। তিনি সোজা তেজগাঁও থেকে বিমানে করে ভারতে গেছেন। এইসব বাদ দিয়ে বরং দেশের সমস্যা সমাধান করার আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর খোদ শেখ হাসিনা এক বার্তায় দাবি করেছেন যে, তিনি পদত্যাগ করেননি। তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ও একাধিকবার দাবি করেছেন যে, তার মা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি।
সূত্র :দৈনিক ইনকিলাব