কক্সবাজারে কলাতলীতে একটি আবাসিক হোটেল থেকে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আটক ১৮ সদস্যের মধ্যে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার বিকেলে তাদের কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়।
যাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিরোধীতাসহ বিভিন্ন সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে। শুক্রবার গভীর রাতে কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকার আবাসিক হোটেল ‘ইউনি রিসোর্ট’ থেকে তাদের আটক করা হয় বলে সদর থানার ওসি ফয়জুল আজীম নোমান জানান।
শুক্রবার মধ্যরাতে শহরের কলাতলীর ইউনি রিসোর্টে নামের আবাসিকর হোটেলের পঞ্চম তলার একটি কক্ষ থেকে গোপন বৈঠক চলাকালে ১৮ জন ইউপি সদস্যকে আটক করা হয়েছিল। যাচাই-বাছাই করে ১৫ জনের বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন থানায় নাশকতার মামলাসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও গুলিবর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফয়জুল আজীম বলেন, কারাগারে পাঠানো ইউপি সদস্যরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটির নেতা। জেলার বিভিন্ন থানায় করা মামলার আসামি তারা।
তিনি আরও বলেন, বৈঠকের বিষয়ে পুলিশকে জানানো হয়নি। খবর পেয়ে পুলিশ হোটেলে তল্লাশি চালায়।
কারাগারে পাঠানো ইউপি সদস্যরা হলেন- রামুর কাউয়ারখোপের মো. আজিম মিয়া (৩৫), মো. কায়েস (৪২) ও মোহাম্মদ আলী (৫৫), গর্জনিয়ার কামাল হোসেন (৩৭), চকরিয়ার সাহারবিলের জসিম উদ্দিন (৪৮) ও রুবেল জলদাস (৩৩), পশ্চিম বড়েভেওলার জুনায়েদ আহমদ (৪০) ও ইরফানুর রহমান (৪০), বদরখালীর কফিল উদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর (৪৬), বমুবিলছড়ির মো. বেলাল উদ্দিন (৪০) ও শফিকুর রহমান (৪২), কোনাখালীর আবুল কালাম (৫৫), কাকারার নজরুল ইসলাম (৩৫), টেকনাফ সদরের শাহ আলম (৩৯) ও কক্সবাজার সদরের চৌফলদণ্ডীর মোহাম্মদ মিয়া (৫৪)।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইউনি রিসোর্টের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ইউনিয়ন সদস্য সংস্থা-বাইসস কক্সবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে ‘রাষ্ট্র সংস্কার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও স্থানীয় উন্নয়নে তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। তার সভাপতিত্বে এতে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার অন্তত ৫ শতাধিক ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান অংশ নেন।
তিনি বলেন, সন্ধ্যায় সভা শেষে অতিথিসহ অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি চলে গেলেও কক্সবাজার জেলার কিছু ইউপি সদস্য অবস্থান করছিলেন ওই রিসোর্টে। সন্ধ্যার দিকে পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কিছু কর্মী আকস্মিক হোটেলটি ঘেরাও করে তাদের আটকে দেন। দীর্ঘ ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় পর ১৮ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কক্সবাজারের অন্যতম সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করতে ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনার দোসর ইউপি সদস্যরা হোটেলকক্ষে জড়ো হয়ে গোপন বৈঠক করছিলেন। খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা পুলিশকে জানান। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আওয়ামী লীগের সমর্থক ১৮ জন ইউপি সদস্যকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। শনিবার তাদের মধ্যে ১৫ জনকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা কক্সবাজারে কাউকে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাতে দেবে না।