ঢাকা: ভারতে ব্যান্ডউইখ ট্রানজিট করবে না বাংলাদেশ৷ গত কয়েকদিনে বাংলাদেশ জুড়ে যে চরম ভারত বিদ্বেষের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কার্যত তাতেই সিলমোহর দিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ৷
উত্তরপূর্ব ভারতে ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও মজবুত করার জন্য বাংলাদেশকে ব্যান্ডউইথ ট্রানজিটের প্রস্তাব দিয়েছিল ভারত সরকার ৷ প্রাথমিক ভাবে সেই প্রস্তাবে রাজিও হয় বাংলাদেশ সরকার ৷ ভারতের প্রস্তাবে ছাড়পত্র দিয়ে দেয় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন বা বিটিআরসি৷ আচমকা চারদিন আগে সেই ছাড়পত্র প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ ফলে গোটা প্রকল্পই প্রশ্নের মুখে ৷
ভারতের সামিট কমিউনিকেশন অ্যান্ড ফাইবার অ্যাট হোম এবং ভারতী এয়ারটেল মিলে এই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্ব পেয়েছিল৷ বাংলাদেশের ছাড়পত্র পেলে এই প্রকল্পের খরচ অনেকটাই কমে যেত৷ বাংলাদেশের আখাউড়ায় টেরেস্টিয়াল কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল৷ যা বাংলাদেশের সাবমেরিন কেবল কোম্পানির কক্সবাজার এবং কুয়াকাটার সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল৷ ভারতের এই প্রস্তাব বাংলাদেশের টেলিকমিউনিকেশন মন্ত্রকের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল৷
বিটিআরসির নথি অনুযায়ী, এ ট্রানজিটের কারণে আঞ্চলিক হাব হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হবে এবং ভারত এখানে শক্তিশালী হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
এটি বাংলাদেশকে মেটা, গুগল, আকামাই এবং অ্যামাজনের মতো কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক (সিডিএন) সরবরাহকারীদের জন্য পয়েন্ট অব প্রেজেন্স (পিওপি) হওয়ার সম্ভাবনাকেও বাধাগ্রস্ত করবে।
পিওপি এমন একটি জায়গা বা ডেটা সেন্টার যা বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মধ্যে আন্তঃসংযোগ পয়েন্ট হিসাবে কাজ করে। এটি বিভিন্ন নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহকারী এবং সিডিএনগুলোর মধ্যে ডেটা ট্র্যাফিক বিনিময় সহজ করে। সংক্ষেপে, এটি এমন একটি কেন্দ্রীয় হাব যেখানে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ডেটা হাইওয়ে একত্রিত হয়।
বর্তমানে মেটা, গুগল, আকামাই এবং অ্যামাজনের মতো সিডিএনগুলোর ভারতের কলকাতা, চেন্নাই এবং মুম্বাই শহরে পিওপি রয়েছে। সামিট এবং ফাইবার অ্যাট হোম ট্রানজিট কানেক্টিভিটির মাধ্যমে ভারতীয় টেলিকম অপারেটররা খুব সহজেই সেভেন সিস্টার্সে ইন্টারনেট সেবা দিতে পারবে।
এ ছাড়া এই ব্যবস্থা বাংলাদেশের নিজস্ব অবকাঠামো দিয়ে মিয়ানমার ও উত্তর-পশ্চিম চীনের কিছু অংশে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার সম্ভাবনাকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলবে।
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথের প্রায় ৬০ শতাংশ সরবরাহ করে সামিট কমিউনিকেশনস ও ফাইবার অ্যাট হোম এর সাতটি আইটিসি এবং বাকি ৪০ শতাংশ সরবরাহ করে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস (বিএসসি)।
বিএসসির ব্যান্ডউইথ ৭ হাজার ২১৭ জিবিপিএস থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে মাত্র ২ হাজার ৩৪৩ জিবিপিএস।
বিসিএসের পর্যাপ্ত ক্ষমতা ও কেবল থাকলেও আইটিসি অপারেটরদের এ ধরনের সংযোগ দেওয়া হলে আইটিসি অপারেটরদের ব্যান্ডউইথ ব্যবহার আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে করে বিসিএসের অব্যবহৃত বিপুল এই ব্যান্ডউইথ কাজে লাগানো ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।’
তবে ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান টেকনোলজি অফিসার সুমন আহমেদ সাবির দাবি করেন, ‘এটি বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর হবে না।’ যদিও তিনি স্বীকার করেন যে, এতে ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলো নিঃসন্দেহে আরও বেশি লাভবান হবে।
‘তবে বাংলাদেশও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে লাভবান হবে, এবং বিএসসি, আইটিসি ও ন্যাশনওয়াইড টেলিযোগাযোগ ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটররা লাভের অংশীদার হবে,’ যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, আলটিমেটলি ভারতের ব্যান্ডউইথ ভারতেই শেষ হবে, আর বাংলাদেশ নিছক একটি ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হবে।
প্রথমে মনে হতে পারে বাংলাদেশ এই ব্যবস্থার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে।
তবে, যেহেতু ট্রানজিট সুবিধার্থে দুটি স্থানীয় আইটিসি সরবরাহকারী ইতোমধ্যে ভারতীয় সংস্থাগুলি থেকে ব্যান্ডউইথ আমদানি করছে, এবং এতে করে পরিষেবা বিনিময়ের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তাতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে বলে জানান আমিনুল হাকিম।
সুত্রঃ