কিংস পার্টি কি ? এই প্রশ্নের উত্তরে সহজে বলতে হবে, কিংস পার্টি ধারণাটি মূলত পশ্চিমাদের থেকে নেয়া। এই ধরনের রাজনৈতিক দলের মাঠ পর্যায়ের সংজ্ঞা দিতে গেলে বলতে হয়, নানা কারণে- যেমন বিদ্রোহ, বিক্ষোভ, জরুরি অবস্থার মতো ঘটনা ঘটলে অথবা, সামরিক কিংবা অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় বসলে, সেই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য নিজেদের ছত্রছায়ায় নব্য রাজনৈতিক দলের জন্ম দেয়া। ক্ষমতার ছত্রছায়ায় জন্ম নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোকেই ডাকা হয় পিপলস পার্টি হিসেবে।
এই ধরনের রাজনৈতিক দলের প্রধান লক্ষ্যই থাকে ক্ষমতাসীন শাসকদলকে বৈধতা দেয়া। মানে কিংস পার্টি ক্ষমতায় থাক আর ক্ষমতার বাইরে থাক, যাদের ছত্রছায়ায় তাদের বিকাশ ঘটেছে, তাদের বৈধতা দেয়াই এই কিংস পার্টির লক্ষ্য।
বাংলাদেশে “কিংস পার্টি” ধারণাটি মূলত পশ্চিমাদের থেকে নেয়া। এই ধরনের রাজনৈতিক দলের মূল লক্ষ্য থাকে ক্ষমতাসীন শাসকদলকে বৈধতা দেয়া। সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময় থেকে শুরু করে, বিভিন্ন সময়ে অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় বসলে বা রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলে, এই ধরনের দল গজিয়ে ওঠে।
কিংস পার্টির ইতিহাস
১৯৮৬ সালে সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করেন, তখন প্রধান বিরোধীদলগুলো নির্বাচন বর্জন করে। এরশাদ তখন জাসদ নেতা আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে একটি সাজানো রাজনৈতিক মোর্চা গঠন করেন, যা পরিচিত ছিলো সমন্বিত প্রতিদ্বন্দ্বী জোট বা কপ নামে। সেই নির্বাচনে কপ ১৯টি আসন পেয়ে সরকারের অনুগত হিসেবে সংসদে বিরোধীদলের মর্যাদা পায়। এরশাদ সরকারের পতনের পর সেই কপ ভেঙে যায়।
২০০৭ সালের ওয়ানে ইলেভেনের পর, ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পর আবারও কিংস পার্টি গঠনের তৎপরতা দেখা দেয়। তখনকার সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিএনপির সাবেক নেতা প্রয়াত ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি বা পিডিপি গঠন করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পিডিপি ভোটে অংশ নেয়, কিন্তু তাদের বেশিরভাগ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
ওয়ান ইলেভেনের সময় গজিয়ে ওঠা আরেক আলোচিত রাজনৈতিক দল হলো বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। তবে ভোটের মাঠে কার্যত কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি কল্যাণ পার্টি।
সাম্প্রতিক তৎপরতা
শেখ হাসিনার পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কাজ শুরু করেছে। যদিও তারা “কিংস পার্টি” গঠনের কথা অস্বীকার করেছে, তবে এই ধরনের দলের সফলতা বা ব্যর্থতা সময়ই বলে দেবে।
কিংস পার্টির ইতিহাসে দেখা যায়, এই ধরনের দলগুলো সাধারণত ভোটের মাঠে তেমন সুবিধা করতে পারে না এবং জনগণের দারা প্রত্যাখ্যাত হয়ে কালের গহ্বরে হারিয়ে যায়।