অবৈধ অর্থ লুটপাট করার যতোগুলো পদ্ধতি আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাভ হয় এই চাঁদাবাজি আর এই চাদাবাজি এখন পরিণত হয়েছে রীতিমত বাণিজ্যে। খুব ভালো করেই জেনে বুঝেই এটাকে মামলা বাণিজ্য নাম দেয়া হয়েছে। ঐ বিশেষ কারবারটি করে চলেছেন বেনজির আহমেদ। নিজেকে তিনি “ছোট বেনজির” হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন, যদিও “মামলা-বেনজির” নামেই তার কুখ্যাতি বাংলাদেশের সর্বত্র। মামলাবাজ বেনজির আহমেদ ছিলেন ফ্যাসিস্ট সরকারের একটি লিথাল এপারেটাস। সরকার পতনের পর তিনি আওয়ামী-লীগ থেকে রাতারাতি জার্সি পাল্টিয়ে হয়ে যান বিএনপি-লীগ। তারপর তার স্বাভাবিক রীতি অনুযায়ীই বিএনপির লোকজনের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে নিরীহ ব্যক্তিদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে অবৈধ অর্থ লুটপাট অব্যহত রাখেন।
“আওয়ামীলীগ যায় – বিএনপি আসে
বিএনপি যায় – আওয়ামীলীগ আসে!
বেনজিরেরা থেকে যায়,
লুটপাট করে খায় আর হাসে!”
বিশ্বস্ত সুত্র থেকে জানা যায়, মামলা-বেনজির এর পরিচিতি হিসেবে জানা যায়, তার পিতা: মো: জয়নাল আবেদীন, মাতা: মমতাজ বেগম, ঠিকানা- গ্রাম: বৈচাতলী, ডাকঘর: গল্লাক বাজার, থানা: ফরিদগঞ্জ, জেলা: চাঁদপুর।
এই মামলা-বেনজির এর বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মামলা বাণিজ্য এবং জোরপূর্বক দখলদারির বস্তুনিষ্ঠ অভিযোগ রয়েছে।
তার বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ২৭ মে: ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলা হয়।
এছাড়া ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে জুলাই ২ কোটি ২৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা এবং একই বছরের ৯ অক্টোবর ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার মামলা হয়। এই মামলায় প্রধান আসামি বেনজির আহমেদ। এসব মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০শে অক্টোবর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে মামলা-বেনজিরকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের আদেশ নম্বর ১২২৫৪।
হাইকোর্ট তাকে গ্রেফতার করার আদেশ দিলেও মামলা-বেনজির কিছু পুলিশ বাহিনীর লোকজনের ছত্রছায়ায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ান।
২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা আগস্ট রনি খান নামের একটি আইডি থেকে পোস্ট করা হয়, যেখানে ঢাকা শহরের শীর্ষ সন্ত্রাসী সম্রাট মিজান সকাল ১১টার মধ্যে “ঢাকা ক্লিয়ারের” দায়িত্ব নেয়। ফেসবুক পোস্টের এই ছবিতে দেখা যায় যুবলীগের সাবেক সভাপতি সম্রাট, সাবেক পালাতক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পিএস মিজানুর রহমান এবং এই মানলা-বেনজিরকে সশস্ত্র অবস্থায়। যুবলীগের সাবেক সভাপতি সম্রাট, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তার পিএস এর সঙ্গে মামলা-বেনজির, রাজউক কর্মচারী শরিফ খান, ক্যাসিনো জুয়াড়ী দেবাশীষ এবং তার পার্টনার মফিজুল ইসলাম – এরা সবাই মিলেই একটি সিন্ডিকেট।
সাবেক গণহত্যাকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তার পিএস এর সহায়তায় মানলা-বেনজির ঢাকা এবং তার আশেপাশের প্রায় প্রত্যেকটা এলাকায় গড়ে ওঠা অপরাধের সাম্রাজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, অবৈধভাবে জমি ক্রয়/বিক্রয়, দখলদারি গুপ্তহত্যা, মানুষকে হত্যার হুমকি, নির্দোষ মানুষের নামে মিথ্যে মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করা আর মোটা অংকের চাঁদা দাবি সবকিছুই হলো তার রুটিন ওয়ার্ক।
বেনজির আহমেদের মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলার শিকার হয়েছেন অন্তত দেড় শতাধিক মানুষ। তাদের ১০ জনের নথি বিশ্বত সুত্রে গণমাধ্যমের হাতে এসেছে, আর বাকিগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।
- ১) মো: সোহাগ, পিতা: মো: হামিদ, দক্ষিণ কাজলা, থানা: যাত্রাবাড়ী।
- ২) মো: সুমন, নয়ানগর, কাজলা, যাত্রাবাড়ী।
- ৩) বাবু, নয়ানগর, যাত্রাবাড়ী।
- ৪) মো. রিয়াজ শেখ, পিতা: পারভেজ শেখ, মাতা: ফাতেমা, সাং – ধলপুর, সুতি খালপাড়, যাত্রাবাড়ী।
- ৫) মো: রবি, নয়ানগর, কাজলা, যাত্রাবাড়ী।
- ৬) মতিয়ার রহমান (গজব), পিতা: মৃত আব্দুল খালেক, ঐরাবো, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
- ৭) হোসেন মোল্লা (খোকন), পিতা: মৃত গিয়াস উদ্দীন মোল্লা, সাং – পেরাবো, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ।
- ৮) মো: গিয়াসউদ্দীন, পিতা: মৃত হাজিমুদীন, ১১৪ রহিম বক্স লেন, পোস্তা, লালবাগ।
- ৯) মো: দিপু, পিতা: আব্দুল কাদের ডাক্তার, দক্ষিণ জামসিং, টি&টি, সাভার।
- ১০) তৌফিক আহমেদ মিশর, পিতা: আবু তালেব মোল্লা, ১৪২ শুক্রাবাদ, ধানমন্ডি। স্থায়ী ঠিকানা: ঘটকচর, মাদারীপুর সদর, মাদারীপুর।
মামলার বাদীরা জানিয়েছেন তারা ঐ আসামিদের নাম তাদের দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করেননি। বাদীর মধ্যে রয়েছেন কুমিল্লার হাবেজা আক্তার, যিনি ১৪ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৩৫।
মো: হুমায়ুন কবির ধানমন্ডি থানায় ২৭শে নভেম্বর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে মামলা দায়ের করেন মামলা নম্বর ১৬।
এছাড়া বশির, সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ৯ই নভেম্বর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে মামলা করেন। মামলা নম্বর ১০।
যেখানে মামলার বাদীরাই প্রকাশ্যেই বলেছেন যে, “তাদের দায়ের করা ঐসব মামলায় এজাহারের বাইরে ‘মামলা-বেনজির’ পুলিশকে কনভেন্স করে খেয়াল-খুশিমতো আসামি অন্তঃর্ভুক্ত করেছেন।” এখানে সবকিছুই স্পষ্ট, আর কিছুই বলার থাকে না। অন্যদিকে, বারংবার তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু তিনি তার অপরিচিত মোবাইল ফোন নম্বরের কল রিসিভ করেননি।
এত অপরাধ করেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন মামলা-বেনজির। এমনকি তাকে গ্রেফতার করার হাইকোর্ট আদেশ পর্যন্ত কিছু পুলিশের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে না।
পুলিশের পোশাকের রং আর ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে, আশা করেছিলাম তাদের চরিত্রেরও পরিবর্তন হবে। জনগন হিসেবে আশা, পরিবর্তনটা যেন পজিটিভ হয়।