ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) স্পষ্ট করে বলেছে, অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশের আগে পাণ্ডুলিপিতে পুলিশের অনুমোদন লাগবে—এমন কোনো সিদ্ধান্ত বা পরামর্শ দেওয়া হয়নি। শনিবার ডিএমপি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায়।
ডিএমপি জানায়, উসকানিমূলক বই প্রকাশের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমিকে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। তবে পাণ্ডুলিপি অনুমোদনের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এবং অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে কমিশনার সাজ্জাত আলী বলেন, “আমরা বাংলা একাডেমির কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছি, এমন বই যেন মেলায় না আসে, যেখানে উসকানিমূলক কথা বা লেখা আছে। এটা যেন তারা স্ক্যানিং করে, ভেটিং করে স্টলে উপস্থাপন করেন।”
অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা এবার বাংলা একাডেমিকে সুপারিশ করছি, আগামীতে নতুন বই প্রকাশের আগে পাণ্ডুলিপি বাংলা একাডেমিতে জমা দেওয়া হোক। আশা করি, আগামী বছর থেকে এটা আমরা করাতে পারব। বাংলা একাডেমি অনুমতি দিলেই বই প্রকাশ করা যাবে।”
পরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য প্রকাশিত হলে ডিএমপি শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিষয়টি স্পষ্ট করে।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবিতা পরিষদের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “একজন পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে যে, বই ছাপানোর আগে বাংলা একাডেমি বা পুলিশকে পড়তে দেওয়া উচিত। এবার না পারা গেলেও আগামীবার দেওয়া উচিত। এটা অবিশ্বাস্য এবং হাস্যকর। এটা আমাদের সরকারের নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আমাদের সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। সেটা যদি আমাকে গালমন্দ করে, তাতেও কিছু যায় আসে না। আমরা কোনো মতপ্রকাশে সেন্সরশিপে বিশ্বাস করি না।”
ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বইমেলায় প্রকাশের আগে পাণ্ডুলিপি অনুমোদনের কোনো নির্দেশনা নেই। তবে উসকানিমূলক বই প্রকাশ রোধে বাংলা একাডেমিকে সতর্কতা অবলম্বনের অনুরোধ করা হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় এই বিষয়ে আলোচনা চলছে।