ঢাকা, ৫ মে ২০২৪ — নারী সংস্কার কমিশন নিয়ে সম্প্রতি এক জনসভায় হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দের অপমানজনক মন্তব্যের প্রতিবাদে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) তিন নেত্রী ও তিন নারী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। নোটিশে হেফাজত নেতাদের “নারীদের বেশ্যা আখ্যা দেওয়ার মতো যৌনবাচক গালি” ব্যবহারকে আইনবহির্ভূত ও সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
নোটিশের মূল বিষয়বস্তু
১. অপমানজনক ভাষার তীব্র নিন্দা:
- হেফাজতের নেতারা সম্প্রতি এক সভায় নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনাকালে নারীদের অমর্যাদাকর শব্দে সম্বোধন করেন, যা নারী অধিকারের লঙ্ঘন।
- এনসিপির বিবৃতিতে বলা হয়, “জুলাই অভ্যুত্থানে নারীরা ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছেন। নতুন বাংলাদেশে নারীদের এভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা অগ্রহণযোগ্য।”
২. হেফাজতের বৈধতা ও দ্বিচারিতা নিয়ে প্রশ্ন:
- নোটিশে হেফাজত নেতাদের নিজ পরিবারে নারীদের ইসলামি উত্তরাধিকার আইন মেনে সম্পত্তি দেওয়া হয়েছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
- এছাড়া, হেফাজতের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা (আওয়ামী লীগের সঙ্গে অতীত সম্পর্ক) এবং একটি রাজনৈতিক দল-ঘেঁষা সংগঠন হিসেবে প্রকাশ্যে সভা করার অনুমতি নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।
৩. আইনি ব্যবস্থার হুমকি:
- নোটিশ প্রেরকরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, নারীর মর্যাদাহানিকর মন্তব্যের জন্য হেফাজতকে আইনের আওতায় আনা হবে।
- এনসিপির নেত্রী সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, “ভিন্নমত থাকতে পারে, কিন্তু নারীদের নিয়ে অশালীন ভাষা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এটি একটি নিপীড়নমূলক আচরণ, এবং আমরা এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছি।”
প্রতিবাদকারীদের তালিকা
নোটিশে স্বাক্ষরকারী ছয় ব্যক্তিত্ব হলেন:
- এনসিপি নেত্রী: সৈয়দা নীলিমা দোলা, দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী, নীলা আফরোজ
- সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব: উম্মে রায়হানা, উম্মে ফারহানা, ক্যামেলিয়া শারমিন চূড়া
সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব
এই ঘটনায় নারী অধিকার কর্মী ও প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই হেফাজতের এমন বক্তব্যকে “মধ্যযুগীয় মানসিকতার প্রকাশ” বলে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে, হেফাজত এখনও এই অভিযোগের ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
পরবর্তী পদক্ষেপ
- নোটিশ প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে হেফাজতকে জবাব দিতে হবে।
- যদি সন্তোষজনক জবাব না আসে, তাহলে আইনি লড়াইয়ের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন নারী নেত্রীরা।
বিশ্লেষণ
এই ঘটনা নারী অধিকার বনাম রক্ষণশীল গোষ্ঠীর সংঘাতের আরেকটি দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশে নারীর অগ্রগতি ও সমতা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে এমন বিতর্ক ক্রমশই রাজনৈতিক ও সামাজক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। হেফাজতের বিরুদ্ধে এই আইনি চ্যালেঞ্জ নারী আন্দোলনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে।
সংবাদটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ: এটি নারী অধিকার, ধর্মীয় রক্ষণশীলতা এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সংযোগস্থলে অবস্থিত, যা বাংলাদেশের সামাজিক পরিবর্তনের ধারা বুঝতে সহায়তা করে।