ঢাকামঙ্গলবার , ৩রা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • অন্যান্য
  1. অর্থনীতি
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. জাতীয়
  5. জীবনধারা
  6. বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
  7. বিনোদন ভুবন
  8. বিবিধ
  9. ভিডিও নিউজ
  10. রাজধানী
  11. রাজনীতি
  12. শিক্ষা
  13. সর্বশেষ
  14. সারাবাংলা
  15. স্বাস্থ্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মাদকের ভয়াল থাবা: ঢাকার পথশিশুদের ‘ড্যান্ডি’ নেশার করুণ দশা

Link Copied!

ঢাকা, ১৫ মে, ২০২৫ : কেরানীগঞ্জের বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে একটি ছাউনিতে বাস করে ১২-১৫ জন পথশিশু। দিনভর তারা ভাঙারি সংগ্রহ করে, আর সন্ধ্যায় ফিরে পলিথিনে মুখ ঢেকে নেশা করে—এটাই তাদের দৈনন্দিন রুটিন। তাদের একজন সুজনের কথায় ফুটে উঠেছে মর্মান্তিক বাস্তবতা: “ড্যান্ডি লইতে লইতে জীবনটা পেলাসটিক হইয়্যা গেল”। এটি কোনো সাধারণ নেশা নয়, এটি ‘ড্যান্ডি’—একটি সস্তা ও ভয়াবহ মাদক, যা ঢাকার পথশিশুদের জীবন গ্রাস করছে।

ড্যান্ডি কী এবং কেন বিপজ্জনক?

ড্যান্ডি মূলত সলিউশন বা আঠা, যা জুতা মেরামত বা টায়ার ফিক্স করতে ব্যবহৃত হয়। এতে থাকা টলুইন নামের রাসায়নিক মস্তিষ্কে উত্তেজনা সৃষ্টি করে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি লিভার, কিডনি ও মস্তিষ্কের অকার্যকারিতা, এমনকি মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। পথশিশুরা পলিথিনে এই আঠা রেখে শুঁকে নেশা করে, যা তাদের ক্ষুধা ও ব্যথা লাঘব করে—কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের স্বাভাবিক জীবনধারা ধ্বংস করে দেয়।

কেন শিশুরা ড্যান্ডির দিকে ঝুঁকছে?

১. সহজলভ্যতা ও সস্তা দাম: ড্যান্ডি পেতে কোনো বাধার প্রয়োজন হয় না, রাস্তার দোকান থেকেই এটি কেনা যায়।
২. পরিবার ও সমাজের অবহেলা: অনেক পথশিশুর অভিভাবকই তাদের প্রতি উদাসীন, ফলে তারা নেশাকে ‘বিনোদন’ হিসেবে নেয়।
৩. মাদক ব্যবসায়ীদের শিকার: মাদক কারবারিরা ইচ্ছাকৃতভাবে শিশুদের নেশাগ্রস্ত করে তাদের দিয়ে অবৈধ কাজ করায়।

মাদকাসক্তির ভয়াবহ পরিণতি

  • শারীরিক ক্ষতি: মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত, অপুষ্টি, শ্বাসকষ্ট, অঙ্গ ক্ষয়।
  • মানসিক বিপর্যয়: অপরাধপ্রবণতা, হতাশা, আত্মহননের ঝুঁকি।
  • সামাজিক অবক্ষয়: মাদকের টাকা জোগাড় করতে চুরি, ছিনতাই, এমনকি হত্যাকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়ছে শিশুরা।

সমাধানের উপায়

১. সচেতনতা বৃদ্ধি: স্কুল, মসজিদ ও কমিউনিটি সেন্টারে মাদকের কুফল সম্পর্কে কর্মশালা করা।
২. পুনর্বাসন কেন্দ্র বাড়ানো: সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসা ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা জোরদার করা।
৩. কঠোর নজরদারি: ড্যান্ডির উৎপাদন ও বিক্রয় বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।
৪. সমাজের দায়িত্ব: অভিভাবক, শিক্ষক ও স্থানীয় নেতাদের শিশুদের প্রতি যত্নবান হওয়া এবং বিকল্প বিনোদনের ব্যবস্থা করা।

সুজনের মতো অসংখ্য শিশু আজ ড্যান্ডির নেশায় নিজেদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে ফেলছে। তাদের রক্ষা করতে রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার—সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। নইলে একটি প্রজন্মই শুধু নষ্ট হবে না, দেশের ভিত্তিও হয়ে পড়বে দুর্বল। মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার দায়িত্ব সবার—আসুন, এই মহৎ কাজে আমরা সবাই অংশ নিই।