বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ- ৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরায় বিধ্বস্ত হয়েছে।
আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিমানটি ১ টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আইএসপিআর জানায়, আকস্মিক এই বিমান দুর্ঘটনায় বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেনেন্ট মো. তৌকির ইসলামসহ ২০ জন নিহত ও ১৭১ জন আহত হয়েছেন।
তারিখ ও সময়: ২১ জুলাই ২০২৫, দুপুর ১:০৬ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়ন করে এবং প্রায় ১:১০-১:১৫ মিনিটের মধ্যে উত্তরার দিয়াবাড়িতে অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের “হায়দার হল” ভবনে আঘাত হানে ।
- বিমানের ধরন: বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান, যা চীনে নির্মিত এবং ৩ দশকেরও বেশি পুরনো।
- উড্ডয়ন স্থান: ঢাকার কুর্মিটোলায় অবস্থিত বিমানবাহিনী ঘাঁটি “এ কে খন্দকার” ।
দুর্ঘটনার কারণ
- যান্ত্রিক ত্রুটি: উড্ডয়নের পরপরই বিমানটি যান্ত্রিক সমস্যার সম্মুখীন হয়, যা ইঞ্জিন বিকল বা নিয়ন্ত্রণ হারানোর মতো গুরুতর ত্রুটি ছিল বলে প্রাথমিকভাবে উল্লেখ করা হয় ।
- পাইলটের প্রচেষ্টা: পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে জনবিরল স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও, বিমানটি স্কুল ভবনে আঘাত হানে ।
- হতাহতের পরিসংখ্যান
- নিহত: ১৯-২০ জন (পাইলটসহ)। নিহতদের বেশিরভাগই স্কুলের শিশু শিক্ষার্থী, যারা ছুটির সময় ভবনের নিচতলায় অবস্থান করছিল ।
- আহত: ১৬৪-১৭১ জন। আহতদের মধ্যে ৭০% এর বেশি শিশু, যাদের শরীরে অগ্নিদগ্ধসহ গুরুতর আঘাত রয়েছে।
আহতদের অবস্থান অনুযায়ী বিভাজন:
হাসপাতালের নাম | আহতের সংখ্যা |
---|---|
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট | ৭০ জন |
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) | ১৪-১৭ জন |
উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল | ৬০ জন |
লুবনা জেনারেল হাসপাতাল | ১১ জন |
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল | ৮ জন |
অন্যান্য | ৫+ জন |
তথ্যসূত্র: 678
🚒 তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্ধার তৎপরতা
- জরুরি সেবা: ফায়ার সার্ভিসের ৯-১০টি ইউনিট, সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ১ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে ।
- চিকিৎসা সহায়তা:
- অগ্নিদগ্ধদের দ্রুত বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়।
- জরুরি হটলাইন চালু করা হয় (নম্বর:
০১৯৪৯-০৪৩৬৯৭
) 68। - মেট্রোরেলের একটি কোচ আহতদের পরিবহনের জন্য সংরক্ষিত হয় ।
🕊️ জাতীয় শোক ও সরকারি পদক্ষেপ
- রাষ্ট্রীয় শোক: ২২ জুলাই (মঙ্গলবার) একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়। সকল সরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং ধর্মীয় স্থানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয় ।
- তদন্ত কমিটি: বিমানবাহিনী একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য 27।
- প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য: অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই ঘটনাকে “অপূরণীয় ক্ষতি” আখ্যা দিয়ে হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান ।
এফ-৭ বিমানের নিরাপত্তা সংকট
- দুর্ঘটনার ইতিহাস: গত এক দশকে বাংলাদেশে এফ-৭ বিমানের ৪টি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ২০০৮, ২০১৫, ২০১৮ সালে পাইলট নিহত হন।
- কারিগরি দুর্বলতা:
- ইঞ্জিন সমস্যা: সিঙ্গেল টার্বোজেট ইঞ্জিন ব্যবহারের কারণে আকাশে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়া মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে।
- আধুনিক ব্যবস্থার অভাব: এই বিমানে উন্নত রাডার, নেটওয়ার্কিং বা ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম নেই।
- বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট: চীন (২০২৩), পাকিস্তান, মিয়ানমার ও ইরানেও এফ-৭ বিমান দুর্ঘটনার রেকর্ড রয়েছে।
- প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা: স্কুলের শিক্ষার্থী ফারহান হাসান তার “বেস্ট ফ্রেন্ড”কে চোখের সামনে মারা যেতে দেখেন। অপর শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম সপ্তম তলা থেকে বিস্ফোরণের দৃশ্য অবলোকন করেন ।
- আতঙ্ক ও শোক: অভিভাবকরা হাসপাতালে ছুটে যান এবং শিশুদের ছবি নিয়ে এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্যটিতে ঘুরে বেড়ান।
এই বিধ্বস্ত কেবল বিমান দুর্ঘটনা নয়—এটি পুরনো সামরিক সরঞ্জামের নিরাপত্তা সংকট, পাইলটের আত্মত্যাগ ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরে। তদন্ত কমিটির ফলাফল ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, পাশাপাশি বিমানবাহিনীর আধুনিকীকরণের তাগিদকে ত্বরান্বিত করবে।