ঢাকা, ২১ জুলাই, ২০২৫ঃ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায় রচিত হয়। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান (এফ-৭ বিজিআই) উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের “হায়দার হল” ভবনে আঘাত হানে। মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় স্কুল ভবন, ছিন্নভিন্ন হয় শতাধিক পরিবারের স্বপ্ন। সন্ধ্যা ৭:৩০ টায় আইএসপিআরের প্রেস বিজ্ঞপ্তি এই মর্মান্তিক খবর নিশ্চিত করে।
ঘটনা :
- সময়: দুপুর ১:০৬ মিনিটে উড্ডয়নের মাত্র কয়েক মিনিট পর বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারায়।
- আঘাতের স্থান: স্কুলের ৭ তলা “হায়দার হল”-এর নিচতলা, যেখানে ছুটির পর শিশুরা জমায়েত ছিল।
- মৃত্যু ও ধ্বংস: ২০ জন নিহত (অধিকাংশ শিশু) ও ১৭১ জন গুরুতর আহত। পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামসহ নিহতরা রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পান।
- আগুন ও আতঙ্ক: বিমানের জ্বালানিতে আগুন ধরে যায়, ফায়ার সার্ভিসের ১০ ইউনিট ১ ঘণ্টা ধরে তা নিয়ন্ত্রণ করে।
সংস্কারবাদী পার্টির মানবিক অভিযাত্রা
২১ জুলাই , সংস্কারবাদী পার্টির সাধারণ সম্পাদক জনাব মোঃ নাজমুল আলম-এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলে পৌঁছান । যুগ্ম মহাসচিব আবু হেলা আল মামুন, আলিফ হোসেন বিপ্লব, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাফি ও নেতাকর্মীবৃন্দ। ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন এবং উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে কথা বলা। আহতদের পরিবারের কাছে আর্থিক সহায়তা ও চিকিৎসার ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি। সরকারের কাছে ত্বরিত তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ দাবি।“এই শোক কেবল পরিবারগুলোর নয়, গোটা জাতির। আমরা দাবি করছি: এমন ট্র্যাজেডি যেন আর কখনো না ঘটে!” — মোঃ নাজমুল আলম, সাধারণ সম্পাদক, সংস্কারবাদী পার্টি।
২২ জুলাই জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। যাতে তিনি পূর্ণ সমর্থন জানান । তিনি বার্ন ইনস্টিটিউটে ৭০ জন, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ৬০ জনসহ মোট ১৭১ জন চিকিৎসাধীনদের খোঁজ নেন। বিমানবাহিনীর উচ্চপর্যায়ের তদন্তে প্রাথমিকভাবে ইঞ্জিন ত্রুটিকে দায়ী করা হয়েছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত কামনা করেন ।
আহত শিশু আইয়ানের মা হাসপাতাল করিডরে ফুঁপিয়ে কাঁদেন: “ওর পরীক্ষা ছিল আগামীকাল… এখন তো হাতই পুড়ে গেছে!”
দলের অন্যতম নেতা, সিলেটবাসী, জনাব মোস্তাফিজুর রহমান শাহীন তাঁর বার্তায় জানান, বেদনাভরা হৃদয়ে আজ আমি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করছি মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে ঘটে যাওয়া বিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার প্রতি। এই দুর্ঘটনায় যেসব নিষ্পাপ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক এবং কর্মজীবী মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন—তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাচ্ছি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। বাংলাদেশের ইতিহাসে আজকের দিনটি একটি গভীর দুঃখ ও শোকের প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকবে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ট্রাজেডি আমাদের জাতিগত নিরাপত্তা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সুরক্ষা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি— দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে, আহত ও নিহতদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে, এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে বিমান চলাচলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে। যারা আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন, তারা শুধুই নাম নয়—প্রতিটি মুখ ছিল একেকটি ভবিষ্যৎ, একেকটি স্বপ্ন। তারা ছিল জাতির সম্ভাবনার প্রদীপ। এক একজন ভবিষ্যৎ সংস্কারক, যারা আর কোনোদিন ক্লাসে ফিরবে না, আর কোনোদিন মা-বাবার কোলে হাসবে না। আর যারা আজ তাদের সন্তান হারিয়েছেন, তাদের হৃদয়ে যে বেদনা বইছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। একজন পিতা-মাতার কাছে সন্তান মানে জীবন, ভবিষ্যৎ, গর্ব, ভালোবাসা—সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু। আজ যাদের সন্তানরা স্কুলের ইউনিফর্ম পরে শিক্ষার আলয় থেকে লাশ হয়ে ফিরেছে, তাদের চোখের জল এই জাতির বিবেককে নাড়া দেওয়া উচিত।
আমি শোকাহত পিতা-মাতাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর সহমর্মিতা জানাচ্ছি। আপনারা একা নন—সমস্ত বাংলাদেশ আজ আপনাদের সঙ্গে কাঁদছে, আপনাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। আমরা কাঁদছি, ভাবছি এবং পরিবর্তনের প্রত্যয় নিচ্ছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি এবং আমাদের জাতি যেন এই শোক কাটিয়ে উঠে সামনে এগিয়ে যেতে পারে—সেই আশা রাখি।
সংস্কারবাদী পার্টির পক্ষ থেকে আজ সম্মিলিত দাবী উত্থাপিত হয়েছে:
- বিমানবাহিনীর পুরনো এফ-৭ বিমান অবিলম্বে প্রতিস্থাপন।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপর দিয়ে বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করা।
- হতাহত পরিবারের স্থায়ী পুনর্বাসন ও শিক্ষা ভাতা চালু করা।
- উত্তরার আকাশে ওঠা ধোঁয়া কেবল বিমানের ধ্বংসাবশেষ নয়, তা আমাদের ব্যর্থতাকেও প্রকাশ করে। ২০টি প্রাণ ও ১৭১টি ক্ষতবিক্ষত শরীর এই দেশকে প্রশ্ন করে: “কত জীবন আর বলি দেবে পুরনো যন্ত্রপাতির বোঝা?”
সংস্কারবাদী পার্টির পরিদর্শন শোককে শক্তিতে রূপান্তরের একটি প্রচেষ্টা—যেখানে মানবিকতা রাজনীতির চেয়ে বড়। এই ট্র্যাজেডি যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার জন্য এক অমোঘ সতর্কবাণী হয়!