ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫ঃ ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। কোটা সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর কতিপয় কিছু ছাত্রলীগ, স্বার্থান্বেষী মহল ও পুলিশের হামলায় রংপুরসহ সারাদেশে অন্তত ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনা জাতিকে স্তম্ভিত করে দেয়। বিশেষ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের নির্মম হত্যাকাণ্ড, যিনি পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়েছিলেন, তা গণআন্দোলনের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় সাহসিকতার নজির স্থাপন করেছে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া ছিল চরম দমন-পীড়নমূলক। বিজিবি মোতায়েন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা এবং পরীক্ষা স্থগিতকরণের মতো পদক্ষেপগুলো প্রকৃত সমস্যা সমাধানের বদলে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের পাশবিক হামলা এবং পুলিশের সহিংসতা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসেরই প্রতিচ্ছবি, যা ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের দিনগুলিকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
আবু সাঈদ, শাহজাহান, সাবুজ আলী, ওয়াসিম আকরাম, ফয়সাল আহমেদ ও ফারুকের রক্তে রঞ্জিত এই আন্দোলন কেবল কোটা সংস্কারের দাবিই নয়, বরং একটি বৈষম্যহীন ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নিন্দা এবং দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের সমর্থন প্রমাণ করে এই আন্দোলনের ন্যায্যতা।
এই ঘটনাগুলো আমাদের শেখায় যে, যেকোনো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর রাষ্ট্রীয় হামলা কেবল ক্ষোভই বৃদ্ধি করে। সরকারের উচিত ছিল শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজা। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর উচিত সংঘাত নয়, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে সংকট সমাধানের পথ খুঁজে বের করা। ১৯৯০-এর ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বিবৃতি এবং বর্তমান প্রজন্মের সংগ্রামের মধ্যে ঐতিহাসিক সমান্তরাল দেখা যায়, যা প্রমাণ করে যে ন্যায়ের লড়াইয়ে প্রতিটি প্রজন্মই তাদের দায়িত্ব পালন করে যায়।