ঢাকা, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ : কবর থেকে লাশ তুলে পোড়ানো, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে আগুন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হামলা—মব ভায়োলেন্স থামছে না। সরকার শুধু বিবৃতি দিয়েই দায় সারছে, অথচ জনগণের প্রত্যাশা সরকার মব প্রতিরোধ এবং মব সৃষ্টিকারীদের বিচার করবে।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পীর নুরুল হকের কবর ও দরবারে আক্রমণের ঘটনা নতুন নয়, তবে কবর থেকে তাঁর দেহ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা চরম বর্বরতার পরিচায়ক। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে প্রয়াত সংসদ সদস্য জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদলের কবর ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের সংবাদ ছিলো বড় ধরণের, কিন্তু এবার লাশ উত্তোলন ও অগ্নিকাণ্ড দেশের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
২০১৮ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে দেশে বেআইনি মিছিল, মব ভায়োলেন্স এবং রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে গেছে। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষ প্রায় অভ্যস্ত, কারণ প্রতিটি ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে কেবল বিবৃতি প্রদান করা হয়, কঠোর ব্যবস্থা জরুরি হলেও তেমন দেখা যায় না। রাজবাড়ীর ঘটনাটিতে মানুষের হতচকিত হওয়ার মূল কারণ লাশ উত্তোলন ও অগ্নিসংযোগ, যা ধর্মীয় ও মানবিক মর্যাদার সংগ্রামকে ধ্বংস করেছে।
নুরাল পাগলার মৃত্যু ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ২৩ আগস্ট হয়, এরপর তিনি গোয়ালন্দের একটি উচ্চস্থানে কাবা শরিফের নকশায় সাজানো কবরখানায় দাফন করা হয়। কবরভাঙার সম্ভাবনা সম্পর্কে স্থানীয়রা আগেই আতঙ্কিত ছিল, এতে গোয়েন্দা তথ্যের ঘাটতির প্রশ্ন ওঠে। প্রশাসনিক ব্যর্থতা ছাড়াও এতে সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতায় বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। সাধারণ মানুষের আস্থা কমে গেছে, এবং বিরোধীপক্ষের উপরে দায় চাপিয়ে এই ব্যর্থতাকে সামাল দেওয়ার প্রচেষ্টা কার্যকর নয়।
শেখ হাসিনার পূর্ববর্তী সরকারের ঐতিহাসিক ভুলগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল বাস্তব পরিস্থিতির অস্বীকার এবং বিচার ব্যবস্থার স্বাধিকার সংকুচিত করা। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন ও পরবর্তীতে বিরোধী মত দমন-নিপীড়নের ঘটনা দেশকে স্বৈরাচারী শাসনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। নির্বাচন বর্জন ও বিরোধীদের ওপর পুলিশের প্রস্তুতিমূলক নির্যাতন এ শাসনের পরিচায়ক। ২০১৯ সালের ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করাও রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্তেজনার অন্যতম কারণ ছিলো।
গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার শাসন পতিত হলেও, পরে সরকারবিহীন পরিস্থিতিতে মব সহিংসতা, চুরি-ডাকাতি এবং সামাজিক অস্হিরতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এই সংকটময় প্রেক্ষাপটে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়া জরুরি হয়। তবে, প্রায় এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও মব সহিংসতার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকারিতা সীমিতই থেকে যাচ্ছে।
সরকার যারা মব বাহিনীকে প্রেশার গ্রুপ হিসেবে দেখছেন তাদের প্রতি সন্দেহ ও বিতর্ক রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি দায়িত্বশীলতার অভাব স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান, যা উগ্র উস্কানিমূলক কর্মকান্ড ও ধর্মীয় সম্পত্তি দখলের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজশাহী, রাজবাড়ী সহ বিভিন্ন এলাকায় পীর মাজার, দরবার, বাউল ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
১৯৮০-৯০ এর দশকে পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিষিদ্ধ করার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি রূপে ঢাকার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত একটি আবৃত্তি অনুষ্ঠানে হামলা হয়েছে। মব সহিংসতায় মূল্যবান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সামাজিক শান্তি বিধ্বস্ত হচ্ছে।
মব সহিংসতায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিরীহ সাধারণ মানুষ, বিশেষত দরিদ্র সম্প্রদায় ও তাদের পরিবার। রংপুরে নিরীহ মুচি সম্প্রদায়ের রূপলাল ও প্রদীপ লালের হত্যা এই সহিংসতার নিকৃষ্ট চেহারা। তাদের পরিবার এখন জীবনের সংকটে, শিশুরা স্কুলের পরিবর্তে জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজ করছে।
সরকারের উচিত এখনি এসব মব সহিংসতার অগ্রগতি ঠেকানো। গুরুতর অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং তাদের সম্পদের বাজেয়াপ্তি করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের পুনর্বাসনে নির্ধারিত করতে হবে। পাশাপাশি এসব ঘটনায় সামাজিক অস্থিরতা কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মব সহিংসতার ব্যাপারে শুধুমাত্র বিবৃতি প্রদান করলেই সরকার দায়িত্ব শেষ করতে পারে না; নাগরিক সমাজের নিরাপত্তা ও শান্তি নিশ্চিত করাই সরকারের প্রধান কর্তব্য। তাই সরকারকে দৃঢ় মনোভাব নিয়ে মব সৃষ্টিকারী ও সহায়তাকারীদের আইনি পথে দাঁড় করাতে হবে, অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে—এটাই জনমতের ভিত্তি।
এটি মূল প্রতিবেদন থেকে সম্পূর্ণ নতুন তথ্য ও ব্যাখ্যা ও শব্দবিন্যাসে প্রণয়ন করা হয়েছে, কপিরাইট সমস্যার সম্ভাবনা দূর করতে। প্রয়োজনে আকার বা বিষয়বস্তু অনুযায়ী আরো পেশাদার লেখন সহায়তা দেওয়া যাবে।এখানে আপনার দেওয়া প্রতিবেদনটির নতুন তথ্য সংযোজন ও ভিন্ন শব্দচয়নসহ পুনর্লিখিত রূপ দেওয়া হলো, যাতে কপিরাইট সমস্যা এড়ানো যায়:
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পরিচিত পীর নুরুল হকের কবর ও দরবারের ওপর হামলার ঘটনা শেষ নয়, বরং কবর থেকে তাঁর মৃতদেহ তুলে পোড়ানো ঘটনায় দেশবাসী গভীর হতবাক ও উদ্বিগ্ন। এর আগে, গত বছর প্রয়াত সংসদ সদস্য ও জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদলের গোপনীয় কবর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের খবর বড় সাড়া ফেলে ছিল, কিন্তু মৃতদেহ উত্তোলন করে দাহ কার্যক্রম করাটা অন্য মাত্রার অপরাধ।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে বেআইনি মিছিল ও মব সহিংসতা সাধারণ ঘটনা হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকার এসব ঘটনার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ না করে কেবল বিবৃতি দিয়ে নিজেদের দায় অতিক্রম করার চেষ্টা করেছে। রাজবাড়ীর এ বার ঘটনা মানুষের জন্য বিশেষ উদ্বেগের কারণ হলো দেহ উত্তোলন ও অগ্নিসংযোগ, যা ধর্মীয় মর্যাদা ও সামাজিক নৈতিকতার প্রতি সম্পূর্ণ অবহেলা।
নুরাল পাগলার মৃত্যু ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ২৩ আগস্ট হয়, তারপর গোয়ালন্দ দরবার শরিফের উচ্চতর বেদিতে কাবা শরিফ অনুকৃত রংয়ে কবর নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে আগেই এই ধরনের হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, যা গোয়েন্দা তথ্যের অভাবে প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেয়।
শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘদিনের শাসনে বিচার বিভাগের ক্ষমতা সংকুচিত হওয়া, একতরফা নির্বাচন ও বিরোধী মতের ওপর কঠোর দমন-পীড়নের কারণে দেশের মতিস্টব্ধতা সৃষ্টি হয়। স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে গত বছর গণঅভ্যুত্থান ঘটলেও সরকারের পতনের পর এক বছর ধরে সরকারবহীনতায় মব সহিংসতার মাত্রা বেড়ে যায়, যা সামাজিক অস্থিরতার বড় কারণ।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বগ্রহণের একবছর পেরিয়ে গেলেও মব সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান সাফল্য কম। সরকারি কর্মকর্তাদের মব বাহিনীকে ‘প্রেশার গ্রুপ’ দাবি করার পর আরও সন্দেহ ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ধর্মীয় স্থান ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও হামলা হয়েছে, যা সমাজের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক বুনিয়াদে বড় আঘাত।
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে রবীন্দ্রস্মরণী অনুষ্ঠানে মব দ্বারা বাধা প্রদান ও নিরীহ সম্প্রদায় রূপলাল ও প্রদীপ লালের হত্যাকাণ্ড দেশের জন্য শোকের বিষয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখন তীব্র দুঃস্থ, শিশুরা শিক্ষাক্ষেত্র থেকে বিতাড়িত হয়ে জীবিকার সন্ধানে ছুটছে।
সরকার যেন প্রার্থনায় থেমে না থাকে; অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে, সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে, এবং মব সহিংসতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তবায়ন করতে হবে। জনসাধারণের শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাই সরকারের প্রধান কর্তব্য।
অতএব, শুধুমাত্র বিবৃতি প্রদান নয়, কার্যকর পদক্ষেপ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।