হিন্দু বা বৌদ্ধরা না খেয়ে থাকলে তাকে বলা হয় “উপবাস”। খ্রিস্টানরা না খেয়ে থাকলে তাকে বলা হয় ‘’ফাস্টিং”। মুসলিমরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় “সিয়াম”। বিপ্লবীরা না খেয়ে থাকলে তাকে বলা হয় ‘’অনশন”।
আর, মেডিক্যাল সাইন্সে উপবাস করলে, তাকে বলা হয় “অটোফেজি”।
২০১৬ সালে নোবেল কমিটি জাপানের ডাক্তার ‘ওশিনরি ওসুমি’-কে অটোফেজি আবিষ্কারের জন্যে পুরষ্কার দেন ।
যাই হোক, ‘Autophagy‘ কি ?
Autophagy শব্দটি একটি গ্রিক শব্দ ।
Auto অর্থ নিজে নিজে এবং Phagy অর্থ খাওয়া ।
সুতরাং, অটোফেজি মানে নিজে নিজেকে খাওয়া ।
মেডিক্যাল সাইন্স থেকে জানা যায়, শরীরের কোষগুলো বাইরে থেকে কোনো খাবার না পেয়ে, নিজেই যখন নিজের অসুস্থ কোষগুলো খেতে শুরু করে, তখন মেডিক্যাল সাইন্সের ভাষায় তাকেই অটোফেজি বলা হয়।
আরেকটু সহজভাবে বলি – আমাদের ঘরে যেমন ডাস্টবিন থাকে, অথবা আমাদের কম্পিউটারে যেমন রিসাইকেল বিন থাকে, তেমনি আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের মাঝেও একটি করে ডাস্টবিন আছে ।
সারা বছর শরীরের কোষগুলো খুব ব্যস্ত থাকার কারণে, ডাস্টবিন পরিষ্কার করার সময় পায় না। ফলে, কোষগুলোতে অনেক আবর্জনা ও ময়লা জমে যায় ।
শরীরের কোষগুলো যদি নিয়মিত তাদের ডাস্টবিন পরিষ্কার করতে না পারে, তাহলে কোষগুলো একসময় নিষ্ক্রিয় হয়ে শরীরে বিভিন্ন প্রকারের রোগের উৎপন্ন করে। ক্যান্সার বা ডায়াবেটিসের মতো অনেক বড় বড় রোগের শুরু হয় এখান থেকেই। মানুষ যখন খালি পেটে থাকে, তখন শরীরের কোষগুলো অনেকটা বেকার হয়ে পড়ে। কিন্তু তারা তো আর অলস হয়ে বসে থাকে না, তাই প্রতিটি কোষ তার ভিতরের আবর্জনা ও ময়লাগুলো পরিষ্কার করতে শুরু করে দেয় ।
কোষগুলোর আমাদের মতো আবর্জনা ফেলার কোন জায়গা নেই বলে, তারা নিজের আবর্জনা নিজেই খেয়ে ফেলে। মেডিক্যাল সাইন্সে এই পদ্ধতিকে বলা হয় অটোফেজি।
শুধুমাত্র এই জিনিসটা আবিষ্কার করেই জাপানের, ওশিনরি ওসুমি ২০১৬ সালে নোবেল পুরস্কারটা পেয়ে গেলেন ।
তিনি আবিষ্কার করেন যে ১২-২৪ ঘন্টা উপবাস রাখলে মানুষের দেহে অটোফেজি চালু হয়।
তিনি প্রমান করেন যে, উপবাস থাকার মাধ্যমে মানুষের নিম্নলিখিত উপকার গুলো হয়-
১| দেহের সেল পরিস্কার হয়।
২| ক্যান্সার সেল ধ্বংস হয়।
৩| পাকস্থলীর প্রদাহ সেরে যায়।
৪| ব্রেইনের কার্যকরীতা বাড়ে।
৫| শরীর নিজে নিজেই সেরে যায়।
৬| ডায়াবেটিস ভালো হয়।
৭| বার্ধক্য রোধ করা যায়।
৮| স্থূলতা দূর হয়।
৯| দীর্ঘ জীবন লাভ করা যায়।