১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ গোয়েন্দা ইউনিটগুলো নজরদারি চালাচ্ছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে কেউ যেন অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারেও তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পাশাপাশি অনলাইনে অপপ্রচার কিংবা গুজব ছড়িয়ে কেউ যেন কোনো ধরনের স্বার্থ হাসিল করতে না পারে সে বিষয়েও তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সাইবার প্লাটফর্মেও চালানো হচ্ছে নজরদারি। ইতোমধ্যে আবাসিক হোটেলসহ বিভিন্ন এলাকায় গত ১ ডিসেম্বর থেকে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে আইনশৃক্সক্ষলা বাহিনী। সোমবার পর্যন্ত গ্রেপ্তারও করা হয়েছে প্রায় দেড় হাজার জনকে।
এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন মামলায় জামিনে থাকা নেতাকর্মীদের পুরনো মামলায় গ্রেপ্তার করছে। দলটির পক্ষ থেকে নয়া পল্টনে প্রধান কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি চাওয়া হলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেশ কয়েকটি শর্তে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় ডিএমপি। যদিও এখন পর্যন্ত নয়া পল্টনেই সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় বিএনপি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অসাধু চক্র যেন কোনো ধরনের সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের ক্রাইম বিভাগ এবং গোয়েন্দা বিভাগ মাঠে রয়েছে। নেতিবাচক কিছু যেন কেউ না ঘটাতে পারে সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক তৎপর। সমাবেশ উপলক্ষে পুলিশের বোম ডিসপোজাল ইউনিট, স্পেশাল ফোর্স, স্পেশাল ডগ স্কোয়াড ও হেলিকপ্টার ইউনিটসহ সব ব্যাটালিয়নকে প্রস্তুত রেখা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে কেউ কোনো ধরনের নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনায় রয়েছে কিনা সেসব খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সংগ্রহ করা হচ্ছে আগাম গোয়েন্দা তথ্য। হোটেল রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে। জায়গাগুলো তল্লাশি করা হচ্ছে এবং খতিয়ে দেখা হচ্ছে সেখানে কাদের আনাগোনা। কেউ যদি কোনো বিশৃঙ্খলা কিংবা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে থাকে তাকে আটক করা হবে।
গত এক ডিসেম্বর থেকে আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযান চলছে। সারা দেশে অভিযান চালিয়ে যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে মামলা রয়েছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
ডিএমপি গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বত্র নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন থাকবে।
সোমবার কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে যেকোনো ধরনের উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে র্যাব। বাহিনীর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, স্পেশাল ফোর্স, স্পেশাল ডগ স্কোয়াড, হেলিকপ্টার ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে।
এছাড়া নাশকতার পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় সেজন্য সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবে র্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে র্যাবের নিরাপত্তা প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এই কথা বলেন তিনি। কমান্ডার মঈন বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে সুষ্ঠু-স্বাভাবিক রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজ করছে। সরকারি ও বিরোধী দল তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। র্যাব সাধারণত জঙ্গি দমন, মাদক কারবারি, অস্ত্রধারী ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে আস্থা অর্জন করেছে।
তিনি আরও বলেন, রাজধানী ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু স্থাপনা রয়েছে। কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, বিদেশি স্থাপনা ও অ্যাম্বাসি রয়েছে। ঢাকা শহরের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা সবসময় সচেষ্ট রয়েছি। শুধুমাত্র এই জনসমাবেশ ঘিরে নয় আমরা সবসময় জননিরাপত্তা, দেশিয় ভাবমূর্তি রক্ষা, বিদেশীদের কাছে যেন দেশীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে সচেষ্ট রয়েছি। যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। আমাদের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, স্পেশাল ফোর্স, স্পেশাল ডগ স্কোয়াড, হেলিকপ্টার ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে।
বিএনপির জনসমাবেশ ঘিরে র্যাবের পক্ষ থেকে রুটিন পেট্রোল থাকবে, চেকপোস্ট থাকবে, সাইবার ওয়ার্ল্ডে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। যাতে কোনো ধরনের উসকানিমূলক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে নাশকতার চেষ্টা না হয়, সেজন্য র্যাবের সদস্যরা সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবে।