ঢাকাবুধবার , ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • অন্যান্য
  1. অর্থনীতি
  2. আন্তর্জাতিক
  3. খেলাধুলা
  4. জাতীয়
  5. জীবনধারা
  6. বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
  7. বিনোদন ভুবন
  8. বিবিধ
  9. ভিডিও নিউজ
  10. রাজধানী
  11. রাজনীতি
  12. শিক্ষা
  13. সর্বশেষ
  14. সারাবাংলা
  15. স্বাস্থ্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ভাষা শহীদদের স্মরণে ডাঃ এম এ সামাদ এর ব্যতিক্রমি আয়োজন দিনব্যপি ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প এ স্বাস্থ্য সেবা পেলো তিন সহস্রাধিক মানুষ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | ডেইলিনিউজ২৪বিডি.কম
ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৫ ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

টাঙ্গাইল, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫: প্রায় তিন হাজারের অধিক সুবিধা বঞ্চিত রোগীদের বিনামূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চিকিৎসা সেবা প্রদান ও ঔষধ সরবরাহ করেছে স্বেচ্ছাসেবী স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং এন্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস)।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ব্যতিক্রমধর্মী এ আয়োজনটি ২১ বছর ধরে করে আসছে ক্যাম্পস। এরই ধারাবাহিকতায় ২১ তম বছরে এসে ক্যাম্পস চলতি বছরেও টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলার হাতিবান্ধা ইউনিয়নের তালিমঘর প্রাঙ্গণে ‘‘ফ্রি মেডিকেল ও চক্ষু ক্যাম্প’’ এর সুবিধা বঞ্চিত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে।

ফ্রি মেডিকেল ও চক্ষু ক্যাম্পে টাঙ্গাইল ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের দরিদ্র গ্রামবাসীগণের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার জন রোগীর নিবন্ধন ও প্রাথমিক রোগ নির্ণয়ের জন্য বিনামূল্যে রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রামসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে মেডিকেল ক্যাম্পের ১০ দিন আগে থেকে অর্থাৎ ১১ থেকে ২০ ফ্রেব্রুয়ারি এবং ২১শে ফেব্রুয়ারির দিন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আগত বিশেষজ্ঞ সহ প্রায় অর্ধশতাধিক চিকিৎসক, দিনব্যাপী রোগীদের সেবা প্রদান করেন ও বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রদান করেন। এছাড়াও ২৫০ এর অধিক চক্ষু রোগীদের বিনামূল্যে চোখের ছানী অপারেশন ও লেন্স প্রতিস্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়।

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প এর পাশা পাশি “ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সুস্থ জীবনধারা” শীর্ষক একটি মুক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ক্যাম্পস এর প্রকাশনা ‘‘প্রয়াস-২১’’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মোঃ শওকত আলী খান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সোনালী ব্যাংক পিএলসি।

আলোচনা সভায় কিডনি বিষয়ের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পস এর সভাপতি দেশের বিশিষ্ট কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ।

তিনি বলেন, কিডনি রোগের প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলছে। আামাদের মত উন্নয়নশীল দেশে কিডনি রোগের হার উন্নত দেশের চেয়ে বেশী। বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লক্ষ লোক কোন না কোন কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিডনি বিকল রোগের চিকিৎসা ব্যয় এত বেশি যে, আমাদের মত দেশের শতকরা দশভাগ লোক তা বহন করতে পারে না। পক্ষান্তরে সবাই যদি স্বাস্থ্য সচেতন হয় এবং সুস্থ জীবন ধারা চর্চা করে তবে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব।

তিনি আরো বলেন, কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্যান্সার প্রতিরোধে ৮ টি স্বার্ণালী উপায়ের উপর জোর দেন, তা হল- নিয়মিত ব্যয়াম, সুষম পরিমিত খাবার ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, মাদক ও ধূমপান পরিহার করা, পর্যাপ্ত পানি পান করা, ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখা, যারা কিডনি রোগের ঝুঁকিতে আছে তাদের নিয়মিত চেক-আপ’এ থাকা ও শিশুদের জন্মগত কিডনি রোগ আছে কিনা তা পরীক্ষা করা ও সময়মত চিকিৎসা করানো এবং বেশি দিন ব্যাথার ঔষধ বা যত্রতত্র এন্টিবায়োটিক ঔষধ সেবন না করা।

তিনি আরো জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে, ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০ লাখের বেশি কিডনি বিকল রোগী সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসার অভাবে অকাল মৃত্যুবরণ করবে। বর্তমানে ৮৫ কোটির অধিক লোক দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। দুঃখজনক হলেও সত্য এরমধ্যে ৭৫ কোটি রোগী জানে না যে মরণঘাতী কিডনি রোগ নীরবে তাদের কিডনি নষ্ট করে চলেছে।

তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রাপ্ত বয়স্কদের মাঝে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীর হার শতকরা ১৬-১৮ ভাগ। কিডনি রোগের শেষ পরিণতি কিডনি বিকল। একবার কিডনি বিকল হয়ে গেলে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় কিডনি সংযোজন অথবা ডায়ালাইসিস। কিন্তু এই চিকিৎসা এতটাই ব্যয়বহুল যে, শতকরা ১০ জন কিডনি বিকল রোগী তা বহন করতে পারে না। পক্ষান্তরে আমরা যদি একটু স্বাস্থ্য সচেতন হই, সুস্থ জীবন ধারা যেমন- কায়িক পরিশ্রম ও নিয়মিত ব্যয়াম করি, সুষম পরিমিত খাবার খাই, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখি, ধূমপান, ফাস্টফুড পরিহার করি, পর্যাপ্ত পানি পান করি তাহলে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সভায় প্রধান অতিথি মোঃ শওকত আলী খান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সোনালী ব্যাংক পিএলসি বলেন, এরুপ মানবিক আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। সমাজের প্রত্যেকে ক্যাম্পস এর মতো মানবিক কর্মকান্ডে নিজেদের সাধ্যমতো অবদান রাখা উচিত। তিনি আরো বলেন, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ব্যায়াম, খেলাধুলার বিকল্প নেই। শিশুদের মোবাইল ফোন, ভিডিও গেইম থেকে চোখ সরাতে মাঠে নামতে হবে, তবেই হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, উচ্চরক্তচাপের মতো মরণব্যাধির হাত থেকে আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করা যাবে।

প্রশিকা (মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র) এর চেয়ারম্যান, মিজ রোকেয়া ইসলাম বলেন, ক্যাম্পস বিগত বছরগুলোতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক লাখেরও অধিক রোগীর বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা, সাড়ে তিন হাজার রোগীর চোখের ছানি অপারেশন, তিনশত রোগীর ঠোঁট কাটা, তালু কাটা রোগীর অপারেশন করেছে এবং বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত আট’টি সেন্টারের মাধ্যমে ডায়ালাইসিস সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আরো নতুন ডায়ালাইসিস সেন্টারের কাজ চলমান রয়েছে।

ক্যাম্পস এর নির্বাহী পরিচালক জনাব রেজওয়ান সালেহীন এই মানবিক কর্মকান্ডে সহযোগিতার নিমিত্তে আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সকল নিবেদিত প্রাণ, চিকিৎসকদের এবং টাঙ্গাইল জেলা রোভারের সকল সদস্যদের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি কিডনি বিকল রোগীদের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিক কাজে নিজেদের কর্মকান্ড নিরলসভাবে চালিয়ে যাবার জন্য সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। ক্যাম্পস গত বিশ বছর যাবৎ নিরলসভাবে দেশের সকলস্তরের গণমানুষকে কিডনি রোগের ভয়াবহতা ও এর উপায় সম্পর্কে সচেতন করতে গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান এই বিশাল কর্মকান্ডে সহযোগিতা করার জন্য।

এছাড়াও আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ড. মোহাম্মদ আলতাফ-উল-আলম, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রচার), তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, খোন্দকার মোস্তান হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। মিজ রোকেয়া ইসলাম, কবি ও কথাসাহিত্যিক, চেয়ারম্যান, প্রশিকা (মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র)। শাহ সানাউল হক, বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও সাবেক যুগ্ম সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন, উপসচিব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। মোঃ আমিমুল এহসান কবির, পরিচালক, পরিবহন অডিট অধিদপ্তর। মোঃ আবদুল্লাহ আল রনী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সখিপুর উপজেলা, টাঙ্গাইল। ডাঃ মোঃ রুহুল আমিন মুকুল, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সখিপুর উপজেলা, টাঙ্গাইল।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, সিরাজুল ইসলাম, প্রধান নিবাহী কর্মকর্তা, প্রশিকা (মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র)। অধ্যাপক ডঃ বিনয় বর্মন, গবেষক, কবি, অনুবাদক, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। নূর কামরুন নাহার, কবি ও কথাসাহিত্যিক, ডিজিএম, ডিপিডিসি। শাকিল আনোয়ার, সভাপতি, সখিপুর প্রেসক্লাব, সখিপুর, টাঙ্গাইল। মোঃ জাকির হোসেন, অফিসার ইনচার্জ, সখিপুর থানা, টাঙ্গাইল। নাসরিন বেগম, কবি ও সাহিত্যিক, প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি, ক্যাম্পস। মুহাম্মদ আমিন শরীফ, উপসচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় ও রেজওয়ান সালেহীন, নির্বাহী পরিচালক, ক্যাম্পস।