বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় আজ রোববার ঘোষণা করা হচ্ছে না। আগামি ৮ ডিসেম্বর মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেছেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।
ট্রাইব্যুনাল জানান, মামলাটি একটি বড় মামলা। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে এই রায় দেওয়া সমীচীন বলে ট্রাইব্যুনাল মনে করেন।
বিচারক বলেন, সবকিছু পর্যালোচনা করতে আরও কিছু সময়ের প্রয়োজন। এই কারণে রায়ের তারিখ কিছুদিন পিছিয়ে দেওয়া হল।
এর আগে, গত ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এই তারিখ ধার্য করা হয়েছিল।
রোববার সকালে রায় ঘোষণার হওয়ার দিন থাকায় মামলার ২২ আসামিকে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। আবরারের পরিবারের সদস্যরাও রায় শোনার জন্য আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী।
মামলার তদন্ত সূত্রে জানা যায়, ওই দিন রাত ১০টা থেকে একটানা রাত ২টা পর্যন্ত আবরারকে শিবির সন্দেহে ক্রিকেট স্ট্যাম্প, স্কিপিং রোপ (মোটা দড়ি) দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। সেই সঙ্গে কিলঘুষি, লাথিও মারা হয়। এভাবে আবরারকে হত্যা করা হয়। এরপর ওই দিনই রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের দোতলার সিঁড়ির করিডর থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে আবরারের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ হয়। নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
এরপর ৮ অক্টোবর আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে ঢাকার চকবাজার থানায় মামলা করেন। ওই বছরের ১৩ নভেম্বর আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান ২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
মামলায় মোট ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি ১৯ জন। বাকি ছয়জনকে তদন্তের পর অভিযুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ২২ জন কারাগারে আছেন। আর তিনজন পলাতক রয়েছেন।
কারাগারভুক্ত আসামিরা হলেন—মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মো. মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু।
পলাতক তিন আসামি হলেন মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ।
এঁদের মধ্যে আদালতে মামলার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আট আসামি। তাঁরা হলেন—ইফতি মোশাররফ হোসেন সকাল, মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, অনিক সরকার, মো. মুজাহিদুর রহমান, মনিরুজ্জামান মনির, এ এস এম নাজমুস শাদাত ও তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ ও সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে তাঁকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।
উল্লেখ্য, বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নিয়ে যান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডর থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ফাহাদের বাবা মো. বরকত উল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।