শনিবার রাত নটার দিকে একটি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে শুরুতে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে সেখানে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ডিপোতে আমদানি হয়ে আসা এবং রপ্তানি মুখি প্রচুর মালবাহী কন্টেইনার ছিল। যার মধ্যে রাসায়নিক পদার্থও ছিল।
সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন বিস্ফোরণের সময় পাঁচ কিলোমিটারের মতো দূরত্বে কাঁপুনি অনুভূত হয়েছে এবং সেখানকার বাতাসে ঝাঁঝালো গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে ।
আগুন নেভাতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে এখনো আগুন জ্বলছে। কিছুক্ষণ পরপর শোনা যাচ্ছে বিস্ফোরণের শব্দ। আজ রোববার সকাল সাতটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত সরেজমিন এ চিত্র দেখা গেছে।
কনটেইনার ডিপোর বাইরে অবস্থান করছেন ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা। তাঁরা উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন।
লাশ উদ্ধার হলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। সর্বশেষ আজ সকাল আটটার দিকে দুটি লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের দুই কর্মীসহ অন্তত ১৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসংলগ্ন সীতাকুণ্ডের শীতলপুর এলাকায় ৭০ কানি জায়গার ওপর কনটেইনার ডিপোটি অবস্থিত।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান ও সুইজারল্যান্ডের এক ব্যক্তির যৌথ মালিকানায় ডিপোটি চালু হয়। আমদানি-রপ্তানি করা বিভিন্ন পণ্য এই ডিপোতে রাখা হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, ডিপোর ভেতরে ৫০০ মিটারের একটি টিনের শেড রয়েছে। এই শেডের টিনের পুরো অংশ উড়ে গেছে। বাতাসে উড়ছে ছাই। আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে টিনের ভাঙা অংশ।
কিছুক্ষণ পরপর শোনা যাচ্ছে বিস্ফোরণের শব্দ। শেডের আশপাশ ঘুরে দেখা যায়, কোথাও আগুন জ্বলছে। কোথাও ধোঁয়া উড়ছে। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে পুরো এলাকা।
‘আমি ঘটনাস্থলের কাছেই ছিলাম। বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে আমার ঘরের ছাদ। পরে ভাতিজাকে আনতে যাই ঘটনাস্থলে। সেই ভয়াবহতার কথা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।’
এভাবেই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোর আগুনের ভয়াবহতার কথা প্রকাশ করছিলেন মো. কামাল হোসেন। তিনি ওই ডিপোর কাছেই থাকেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ডিপোর শ্রমিক সুপারভাইজার মোহাম্মদ মহসিন গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিস্ফোরণের পর ডিপোতে আগুন ধরে যায়। ডিপো থেকে শ্রমিকদের বের করে দিতে সঙ্গে সঙ্গে বাজিয়ে দেওয়া হয় সতর্কঘণ্টা। তবে সব শ্রমিক বের হতে পারেননি বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ডিপোর শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫০০ মিটার শেডের ভেতরে হাইড্রোজেন পারক্সাইড নামে একটি কেমিক্যাল রয়েছে। এগুলো বিদেশে রপ্তানি করা হয়। রপ্তানির জন্য হাটহাজারীর ঠান্ডাছড়ি কারখানায় উৎপাদিত কেমিক্যাল কনটেইনারে করে এই ডিপোতে রাখা হয়।
চট্টগ্রামের পাশাপাশি কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের ১৮৩ জন কর্মী আগুন নেভাতে কাজ করছেন। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর ক্ষয়ক্ষতিসহ আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যাবে।
ঘটনাস্থলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। বাইরে উৎসুক জনতার ভিড় বিদ্যমান। অহেতুক লোকজন যাতে এখানে ভিড় না করতে পারে, উদ্ধারকাজে ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে, সে জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।
কনটেইনার ডিপোর দক্ষিণ পাশে স্বেচ্ছাসেবক দল গাউছিয়া কমিটির সদস্য তাওহীদুল আলম বলেন, ‘ভেতর থেকে কোনো লাশ উদ্ধার হলে তা নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। আজ সকাল থেকে নয়টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।’
গাউছিয়া কমিটির পাশাপাশি আল মানাহিলসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে ডিপোর আশপাশে অবস্থান করতে দেখা গেছে। উদ্ধারসহ নানা কাজে তাঁরা সহায়তা করছে।