বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্যদিয়ে কেবল একজন মহামানবের প্রস্থান হয়নি, এরসঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের সার্বভৌমত্বও কেড়ে নেয়া হয়েছিল। আর এ সবই হয় একটি বৃহৎ পরাশক্তির ছত্রছায়ায়। সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের বাস্তবায়ন ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থান। ওই দিন থেকে বাংলাদেশে এক বিপরীত ধারায় যাত্রা শুরু করে। বেসামরিক সরকার উৎখাত হয়, শুরু হয় সামরিক শাসনের অনাচারি ইতিহাস।
এযাবৎকালে বাংলাদেশ সফরে আসা বিশ্বনেতারা যা ব্যক্ত করে গেছেন ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মহান স্বপ্নদ্রষ্টা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তারা বঙ্গবন্ধুর আপসহীন ও মানবতাবাদী নেতৃত্বের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মহান স্বপ্নদ্রষ্টা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
বিভিন্ন সময় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনকালে বিশ্বনেতারা জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন জনগণের নেতা। জনগণের সেবায় তিনি সর্বোচ্চ ত্যাগস্বীকার করেছেন। ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনে রক্ষিত পরিদর্শক মন্তব্য বইয়ে এই মূল্যায়ন তুলে ধরেন তারা।
২০১৫ সালের ৬ জুন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন শেষে মন্তব্য বইয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লেখেন, ‘বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ একটি জাতিকে স্বাধীনতার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। সোনার বাংলার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানের মতো ঘটনা মানবসভ্যতার ইতিহাসে খুবই বিরল। মহান একজন মানবতাবাদী হিসেবে তিনি সব মানুষের জন্য সমতা, সুযোগ ও মর্যাদার মহান প্রবক্তা।
তিনি আরও লেখেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে সম্মানিত মনে করছি। ভারতের জনগণের পক্ষে আমি একজন মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্থায়ী সম্পর্কের যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন, আমি তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’
বঙ্গবন্ধুর দেখানো আদর্শ ও মূল্যবোধ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের পরবর্তী প্রজন্মকে পথ দেখাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রিয় জাতির পিতার জীবন ও কর্মের সাক্ষ্য দেয়া ভবন পরিদর্শন করে নিজেকে সম্মানিত মনে করছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণাদায়ী নেতা।
২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইয়োলড্রিম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। এ সময় মন্তব্য বইয়ে তিনি লেখেন, বাংলাদেশের মহান স্থপতি এবং বাঙালি রাষ্ট্রনায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিধন্য বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন আমার জন্য খুবই সম্মানের বিষয়। বঙ্গবন্ধু কতিপয় ষড়যন্ত্রকারী সামরিক অফিসারের হাতে নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেছেন। তার মৃত্যুর পর প্রায় ৪০ বছর পার হয়ে যাওয়ার পর শেখ মুজিবুর রহমান এখনও ২০ শতকের একজন অন্যতম নেতা হিসেবে স্মরণীয় ও বরণীয়।
তিনি লেখেন, ‘তুরস্কের জনগণ এবং মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের পক্ষ থেকে আমি একজন মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। বাংলাদেশ সফরকালে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করে আমি ব্যক্তিগতভাবে যা প্রত্যক্ষ করেছি, তা আমার হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। আমি বিশেষ করে উল্লেখ করতে চাই যে, আমরা বাংলাদেশের স্থপতি প্রয়াত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একই উষ্ণ ভাবাবেগে ডুবে আছি এবং তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’
মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহীম মোহামেদ সলিহ বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে লেখেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সারা জীবনের সংগ্রাম বাংলাদেশকে তার চূড়ান্ত লক্ষ্য স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের পথকে তৈরি করেছে। তিনি গণতন্ত্র ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার লাভের ক্ষেত্রে আইকন হিসেবে সবসময় স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার আদর্শ বাংলাদেশ ও বিশ্বে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।